মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

করোনা এবং ভোটের মরশুমে শুরু হলো গ্রাম বাংলার গাজন উৎসব! রইলো ভিডিও

০২:২৫ পিএম, এপ্রিল ৯, ২০২১

করোনা এবং ভোটের মরশুমে শুরু হলো গ্রাম বাংলার গাজন উৎসব! রইলো ভিডিও

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ নদিয়াঃ মলয় দেঃ চৈত্র মাস এলেই গ্রাম বাংলার চিরা চরিত প্রথা অনুযায়ী শুরু হয় গাজন উৎসব । সাধারণভাবে " গা " শব্দের অর্থ গ্রাম এবং " জন " শব্দের অর্থ জনসাধারণ। অর্থাৎ এককথায় বলা যায় গাজন বাংলার জনসাধারণের একটি উৎসব। সেই কারণেই এর এইরূপ নামকরণ। অপর আরেকটি মতে বাংলায় গাজন শব্দটি এসেছে "গর্জন" শব্দটি থেকে। বলা হয়ে থাকে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সমস্ত সন্ন্যাসীরা প্রচন্ড গর্জন করেন বলেই এই অনুষ্ঠানের নাম গাজন।

গাজন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলা দেশে পালিত একটি হিন্দু লোক উৎসব। এটি শিব , নীল , মনসা ও ধর্মঠাকুরের পুজো কে কেন্দ্র করে বিশেষ একটি অনুষ্ঠান। বাংলার কিছু অঞ্চলে এটি সমস্ত চৈত্র মাস ধরে পালিত হয়। আবার বেশির ভাগ অঞ্চলে চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ ধরে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে উক্ত অনুষ্ঠান পালন করার রীতি বিরাজমান রয়েছে। গাজন অনুষ্ঠানে দুজন শিব ও গৌরী সেজে ও অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূত, প্রেত ও অন্যান্য দৈত্য দানবের সং সেজে নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ সাধনের মাধ্যমে দেবাদিদেব কে সন্তুষ্ট করার প্রয়াস চালান। এমনকি এরা সং সেজে বিভিন্ন নৃত্য ক্রিয়াতেও অংশ গ্রহণ করে থাকেন ।

[caption id="attachment_9820" align="alignnone" width="1078"]করোনা এবং ভোটের মরশুমে শুরু হলো গ্রাম বাংলার গাজন উৎসব! রইলো ভিডিও করোনা এবং ভোটের মরশুমে শুরু হলো গ্রাম বাংলার গাজন উৎসব! রইলো ভিডিও / নিজস্ব ছবি [/caption]

লোকবিশ্বাস অনুযায়ী গাজন উৎসবের দিনে দেবী হরকালির সাথে শিবের বিবাহ হয়। বিবাহ উৎসবে সন্ন্যাসীরা বর যাত্রী হিসেবে অংশ নেন অন্যদিকে ধর্ম ঠাকুরের গাজন হলো ধর্ম ঠাকুর ও দেবী কামিনী কামাখ্যার দেবী মুক্তির বিবাহ উৎসব। শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন, আদ্যের গাজন প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণীতে এই উৎসবকে ভাগ করা যায়। আবার অপর আর একটি মতে সূর্যের সাথে পৃথিবীর বিবাহ দেবার অনুষ্ঠান এই গাজন অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বলেও কিছু শ্রেণীর মানুষের ধারণা।

প্রাচীন ইতিহাস সূত্রে জানা যায় চৈত্র মাস থেকে বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত সূর্য যখন প্রবল অগ্নিময় রূপ ধারণ করে তখন সূর্যের তেজ প্রশমন ও বৃষ্টির আশায় কৃষিজীবী সমাজ এই অনুষ্ঠানের উদ্ভাবন করেছিলেন। প্রধানত, গ্রাম্য শিব মন্দির কে কেন্দ্র করে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । গাজনের সময় শিব প্রকৃত অর্থে গণদেবতা। প্রত্যেকেই সমমর্যাদায় শিবের উপাসনা করেন। গ্রামাঞ্চলে অনেক সন্ন্যাসীই তাদের গালে কাঁটা বা শিক ফুটিয়ে, আগুন ও কাঁটার ওপর দিয়ে হেঁটে এবং সারাদিন আহার না করে উপবাস থেকে এবং চৈত্র সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ মাসের শেষ দিন নিজের পৃষ্ঠ দেশে বর্শি বিঁধিয়ে চড়ক উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। এই সময় অনেক মানুষ চড়কের সন্ন্যাসীকে ফলাহার করান। অনেকেই তাদের শিশুকে চরকের সন্ন্যাসীর কোলে তুলে দেন এবং জনশ্রুতি অনুযায়ী পুণ্য অর্জনের চেষ্টা করেন। বলা যায় চৈত্র মাসের শেষে অর্থাৎ সংক্রান্তির দিনেই তাদের সমস্ত ব্রত ভঙ্গ করেন।

আবার চরক সংক্রান্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও সেখানে সময়মতো জমির খাজনা না দেবার কারণ বশত বাংলার নিষ্ঠুর জমিদার কর্তৃক প্রজাদের শূলে চড়ানোর মর্মান্তিক কাহিনীর ইতিহাস জানা যায়। গতবছরে লকডাউন হওয়ার পর গ্রাম বাংলার এই ধর্মীয় সংস্কৃতিতে অনেকটাই ভাঁটা পড়ে, এ বছরও তা অতিক্রম করে খুব বেশি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। দেখে নিনগ্রাম বাংলার গাজন উৎসব, রইলো ভিডিও..

https://youtu.be/Y1dfyR94usU