ভাইফোঁটা দিতে এসে দাদার হাতে খুন হলেন বোন। সঙ্গে ছেলের হাতে খুন বাবা-মাও। বোন ও বাবা-মাকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত যুবক। যদিও আত্মঘাতী হওয়ার আগেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির ধনেখালিতে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত যুবকের নাম প্রমথেশ ঘোষাল। তিনি ধনেখালির দশঘড়া রায়পাড়ার বাসিন্দা। সেখানে একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন প্রমথেশ। পেশায় তিনি ছিলেন গৃহশিক্ষক। শনিবার ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে বাড়িতে এসেছিলেন বিবাহিতা বোন পল্লবী চ্যাটার্জী (৩০)। দাদাকে ভাইফোঁটাও দেন তিনি। তবে এদিন বাবা অসীম ঘোষাল (৬৭), মা শুভ্রা ঘোষালের (৬৪) সঙ্গে বোন পল্লবীকেও রড দিয়ে মেরে, ব্লেড দিয়ে গলার নলি কেটে নৃশংসভাবে খুন করেন ওই যুবক। এরপর নিজের সারা শরীরেও ব্লেড দিয়ে চিরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
[caption id="attachment_39163" align="alignnone" width="1375"] ভাইফোঁটা দিয়ে দাদার হাতে খুন বোন! বাবা-মাকেও হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা হুগলির এই গৃহ শিক্ষকের[/caption]কিন্তু কেন এই নৃশংস কাণ্ড ঘটালেন ওই যুবক? পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, গৃহশিক্ষক প্রমথেশ বহু সংখ্যক ছাত্র পড়ালেও তাঁর মদের নেশা ছিল। যার জেরে সম্প্রতি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন তিনি। এই কারণেবেঙ্গালুরু, চেন্নাইতে গিয়ে চিকিৎসা করান প্রমথেশ। এজন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। এসবের মধ্যেই লকডাউনের জেরে গতবছর থেকে টিউশনেও মন্দা নামে৷ এদিকে বাবা-মা ও নিজের চিকিৎসার জন্য খরচ বাড়তেই থাকে। অন্যদিকে, ভগ্নীপতি ভালো রোজগার না করায় বোনের সংসারও টানতে হত তাঁকে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রমথেশ। এসবের জেরেই তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পুলিশের অনুমান, এরপরই মদ্যপ অবস্থার বাড়ি এসে পরিবারের সকলকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
যদিও এদিন নিজের ছাত্রদের কারণেই আত্মঘাতী হওয়া থেকে প্রাণে বাঁচেন প্রমথেশ। স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এদিন সকালে প্রমথেশের কাছে পড়তে আসেন ছাত্ররা। এসে ডাকাডাকি করে কারোর সাড়া না পেয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এলাকাবাসীরাও জড়ো হন সেখানে। সকলের চিৎকার, ডাকাডাকিতে একসময় মদ্যপ অবস্থায় বেরিয়ে আসেন প্রমথেশ। তখনই দেখা যায় তাঁর গা ব্লেড দিয়ে চেরা। এরপরই এলাকাবাসী বাড়িতে ঢুকে প্রমথেষের বাবা, মা এবং বোনের রক্তাক্ত দেহ আবিষ্কার করেন। তাঁরাই ধনেখালি থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
[caption id="attachment_39162" align="alignnone" width="1375"] ভাইফোঁটা দিয়ে দাদার হাতে খুন বোন! বাবা-মাকেও হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা হুগলির এই গৃহ শিক্ষকের[/caption]এই ঘটনার পরই প্রমথেশকে আটক করে পুলিশ। আহত অবস্তায় থাকায় চিকিৎসার জন্য ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ঘটনা প্রসঙ্গে হুগলির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) আমনদীপ জাখু বলেন, "ছাত্র পড়ানোর টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রমথেশ। মানসিক অবসাদ থেকেই পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। অভিযুক্তকে আটক করে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। কী কারণে খুন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"