শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩

বাড়িতে বাবার মৃতদেহ! শোক বুকে চেপে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়ে! বাড়ি ফিরে সম্পন্ন হল মুখাগ্নি

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম | আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম

বাড়িতে বাবার মৃতদেহ! শোক বুকে চেপে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়ে! বাড়ি ফিরে সম্পন্ন হল মুখাগ্নি
বাড়িতে বাবার মৃতদেহ! শোক বুকে চেপে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়ে! বাড়ি ফিরে সম্পন্ন হল মুখাগ্নি

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এই বছর যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (Higher Secondary Exam 2023)  দিচ্ছে, তাঁদের এটিই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দেখতে গেলে। কারণ করোনাকালে তারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়নি। আর এই জীবনের প্রথম পরীক্ষায় দিতে গিয়েই জীবনের আরও এক বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন এক পরীক্ষার্থী।   

শুক্রবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় ভাষা অর্থাৎ ইংরেজি পরীক্ষা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদিন ভোর চারটের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মৌসুমী দলুইয়ের বাবা অষ্টম দলুই, বয়স মাত্র ৪০ বছর। মৌসুমী বোলপুর পৌরসভার অন্তর্গত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুরের বাসিন্দা। তাঁর পড়াশোনা পারুল ডাঙ্গা শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে। এই মৌসুমীই আজ বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই, প্রবল মনের জোরকে সম্বল করে উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিল।

জানা গিয়েছে, মৌসুমির মামা মৃত অষ্টম দলুই বোলপুরের নেতাজি মার্কেটে চায়ের দোকান চালাতেন। ওই দোকানের রোজগারেই তাঁর দুই কন্যা সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চলত। অষ্টম দোলুই স্বপ্ন ছিল, তাঁর দুই মেয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করে যাতে মানুষের মত মানুষ হয়। বিশেষ করে বড় মেয়ে মৌসুমী যখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল ভালোভাবে যেন পরীক্ষায় সফল হতে পারে মৌসুমী।

বাবার এই স্বপ্নকে বিফলে যেতে দেয়নি মৌসুমী। তাই শুক্রবার ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরেও, মৌসুমী সমস্ত শোককে উপেক্ষা করে বোলপুর শৈল বালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পৌঁছায়। বাবার অকাল মৃত্যুতে পরিবার-পরিজন এবং নিজে কান্নায় ভেঙে পড়লেও, বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই শেষমেষ নিজেকে শক্ত করে, পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষা দেয়।

এদিকে, অষ্টম দোলুইয়ের মৃতদেহ সৎকারের জন্য ভুবন ডাঙ্গার শুকনগর শ্মশানে আনার পর মৌসুমীর জন্য পরিবারের লোকজন অপেক্ষায় ছিলেন। কারণ বাড়ির বড় মেয়ে হওয়ার দরুণ তাকেই মুখাগ্নি করতে হয়। তবে, এসবের পরেও মৌসুমী জানিয়েছে, বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে বাকি যে চারটি পরীক্ষা রয়েছে সেগুলিতেও সে বসবে।