শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

এটিই ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা! জানুন বাংলার ঐতিহাসিক মার্বেল প্যালেসের ইতিহাস

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২২, ০৮:০৭ এএম | আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২২, ০২:০৭ পিএম

এটিই ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা! জানুন বাংলার ঐতিহাসিক মার্বেল প্যালেসের ইতিহাস
এটিই ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা! জানুন বাংলার ঐতিহাসিক মার্বেল প্যালেসের ইতিহাস

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার একটি দর্শনীয় ভবন হল ‘মার্বেল প্যালেস’। যতটা না মর্মর প্রাসাদের জন্য এই প্রাসাদ বিখ্যাত তার থেকেও বেশি দর্শনীয় এখানকার চিত্রভাস্কর্যাদি এবং এক বিচিত্র সংগ্রহশালার জন্য। ৪৬ মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে অবস্থিত এই প্রাসাদটি বাবু রাজেন্দ্রনাথ মল্লিক বাহাদুরের (১৮১৯-৮৭ খ্রিস্টাব্দ) তৈরি। তিনি রাজা রাজেন্দ্রলাল চোরবাগানের মল্লিক বংশের সন্তান। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৮৩৫ সালে তিনি এক ফরাসি স্থপতিকে দিয়ে এই ‘মার্বেল প্যালেস’ নির্মাণ শুরু করান। 

এই প্রাসাদটি শেষ হতে সময় লেগেছে ৫ বছর। এই ভবনের মেঝে থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত বিস্তৃত বেলজিয়াম কাঁচের আয়না ঘরগুলোর শোভা যেন‌ও আর‌ও বেশি প্রস্ফুটিত করেছে। এছাড়াও ওই ভবনে রয়েছে ভিক্টোরীয় যুগে নির্মিত কারুকার্য করা কাঠের ও পাথরের আসবাবপত্র,বিশাল ঝাড়বাতি,বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান ঘড়ি, অত্যন্ত দামী কার্পেট, দৃষ্টিনন্দন বাতিদান আর‌ও কত কী! এই বাড়িটিকে তিনি মূলত শিল্পের ভাড়ার হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, উত্তর কলকাতার উনবিংশ শতকের প্রাসাদগুলির মধ্যে সৌন্দর্য্যের বিচারে এটি সর্বোত্তম। নিউক্ল্যাসিকাল স্থাপত্যরীতিতে গড়ে তোলা এই তিনতলা ভবনটির সামনে বাঙালি রীতিতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও বিশাল বাগান রয়েছে। তিনতলা এই ভবনটির সামনেটা জুড়ে রয়েছে কোরিন্থিয়ান রীতিতে তৈরি স্তম্ভ এবং সুন্দর কারুকার্য করা বড় বারান্দা। চীনা প্যাভিলিয়নের ধরনে নির্মিত হয়েছে এই ভবনের ঢালু ছাদ। এক‌ইসঙ্গে এই ভবনটির ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। গ্রিক ও রোমান পুরাণের দেবদেবী মার্কারি, কিউপিড, জিউস, মিনার্ভা, যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে শ্বেত পাথরের দেওয়ালে। তবে শুধু বিলেতি কাজ নয়, ভিতরে রয়েছে বাঙালি রীতিতে তৈরি ঠাকুরদালান‌ও। পাশ্চাত্য শিল্পকলায় মোড়া অসংখ্য ভাস্কর্য, বিশাল সব চিত্রকর্মের সঙ্গেই ওই ভবনে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের পোট্রেটটিও বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে ।

প্রসঙ্গত, বলা হয়ে থাকে, ১২৬ ধরনের মার্বেল দিয়ে তিনতলা ভবনটির নির্মাণ করা হয়েছে। আর সেই জন্যই এই প্যালেসের নাম মার্বেল প্যালেস। মার্বেল প্যালেসের সামনে রয়েছে বিশাল বাগান। এখানে থাকা সিংহের মূর্তিগুলো ভীষণ‌ই সুন্দর। এই বাগানে একটি ছোট চিড়িয়াখানাও রয়েছে । জানা যায় রাজেন্দ্র প্রসাদ নিজের স্ত্রীর আবদার এই চিড়িয়াখানা নির্মাণ করেন। এটি ছিল ভারতবর্ষের প্রথম ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। তখনো কলকাতার বুকে জন্ম নেয়নি আলিপুর চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে পেলিক্যান পাখি, ময়ূর, চিতা বাঘ হরিণ, সারস,বিভিন্ন প্রজাতির বক, বিভিন্ন প্রজাতির বুনো হাঁস,হাড়গিলে পাখি, বাঁদর,সজারু,চিতাবাঘ,বনবিড়াল, গন্ধগোকুলসহ আর‌ও অনেক কিছুর।

উল্লেখ্য, এই প্যালেস সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। এখন‌ও এই জমিদার পরিবারের সদস্যরা এই এ বাড়িতে বাস করেন। তাই দর্শনার্থীরা শুধু ভবনটির একটি অংশেই ঢুকতে পারেন। প্রাসাদের অন্দরমহলে এবং প্রসাদের ভিতরে অবস্থিত জগন্নাথদেবের মন্দিরে ঢোকার অনুমতি বাইরের জনসাধারণের নেই।  এছাড়াও এই প্যালেসে ঢুকতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।