শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

বয়স প্রায় ১১২ বছর, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার! জানুন ‍‍`টালা ট্যাঙ্কের‍‍` অজানা ইতিহাস

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২২, ০৭:৩৩ এএম | আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২২, ০১:৩৩ পিএম

বয়স প্রায় ১১২ বছর, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার! জানুন ‍‍`টালা ট্যাঙ্কের‍‍` অজানা ইতিহাস
বয়স প্রায় ১১২ বছর, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার! জানুন ‍‍`টালা ট্যাঙ্কের‍‍` অজানা ইতিহাস

তখন ঢেলে  নগরীকিকরণ চলছে ব্রিটিশ কলকাতার। নাগরিক পরিষেবা বাড়ানোই একমাত্র লক্ষ্য ব্রিটিশদের। নাগরিক পরিষেবার মধ্যে অন্যতম পানীয় জল। তত্‍কালীন পুর ইঞ্জিনিয়র মিস্টার ডেভেরাল একটি ট্যাঙ্ক ( রিজার্ভার) তৈরির প্রস্তাব দেন । প্রস্তাবটি তৈরি করেছিলেন তাঁর সহকারি মিস্টার পিয়ার্স । প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হয় বেঙ্গল গভর্নমেন্টও । ১৯০১ সালের প্রস্তাব কর্পোরেশন গ্রহণ করে ১৯০২ সালে । এর ঠিক এক বছর পর এই প্রস্তাবে সামান্য অদলবদল আনেন পৌরসভার নয়া নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়র ডব্লু বি ম্যাকক্যাবে । তাতে প্রস্তাবিত অঙ্কের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা । তবে আরও উন্নত জল পরিষেবা সম্ভব বলে তাতে সম্মতি দেয় পৌরসভা ।

কিন্তু কোথায় হবে এই ওভারহেড ট্যাঙ্ক ? বেছে নেওয়া হয় টালাকেই। পুরো অঞ্চলটি সেইসময় ডিহি পঞ্চগ্রাম নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান টালা তারই একটা অংশ।শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জলের ট্যাঙ্ক। ওই এলাকায় তখন বেশ কয়েকটি পুকুর ছিল। পুকুরগুলিকে জলশূণ‍্য করে চারিদিকে শাল খুঁটি দিয়ে ২০-২৫ ফুট পাইল করে খোয়া দিয়ে ভর্তি করা হয়। ভারি স্টিম রোলার দিয়ে সমান করে তার ওপর খোয়া দিয়ে ৯ ইঞ্চি পুরু আরও একটি স্তর তৈরি করা হয়। এরপর আড়াই ফুট পুরু কংক্রিট সিমেন্টের উপর ফ্ল্যাট স্টিল টাঁই-এর সঙ্গে বোল্ড স্টিল জয়েন্ট দিয়ে স্তম্ভগুলিকে দাঁড় করানো হয়। তাই বলা যেতেই পারে কলকাতাবাসীকে জলের চাহিদা মেটাতে কয়েকটি পুকুরকে মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে তুলে দিয়েছিল ব্রিটিশরা।

জানা যায়, ১৯১১-র ১২ জানুয়ারি কাজ শেষ হয় এবং সে বছরের ১৬ মে থেকে এটি চালু করা হয় । ট্যাঙ্কটি তৈরি করতে খরচ হয় ২২ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১ টাকা। ব্রিটিশদের সঙ্গে দুই বাঙালির সংস্থাও এই নির্মাণে যুক্ত ছিল।

জনশ্রুতি বলে, শুরুর দিকে নাকি এই জল পান করতে চায়নি শহর কলকাতা। কারণ তখনও পর্যন্ত ধারণা ছিল, গঙ্গার জলই একমাত্র পবিত্র। আর সেই জল মেশিন মারফত পাইপের ভিতর দিয়ে আসার ফলে সেই জ্বরের পবিত্রতা বিনষ্ট হয়। জানা যায়, এই কারণবশত নাকি পাঁচ বছর তাই টালা ট্যাঙ্কের জল ব্রাত্যের তালিকায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, টালা ট্যাঙ্কের জল ব্যবহার না করে শহরবাসীর অন্য কোনও উপায় নেই। সে দিন থেকে আজও কলকাতা বাসের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে টালা ট্যাঙ্ক। উত্তর ও মধ্য কোলকাতা তো বটেই, ভবানীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই টালা ট্যাঙ্কের জলধারা।

টালার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক ইতিহাস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫)-এর সময় টালা ট্যাঙ্কের উপর বোমা ফেলে জাপান। কিন্তু সেই জাপানি বোমায় টালা ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়নি। মাত্র ৯টি ক্ষত হয়। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধে চীন এবং পাকিস্তানেরও টার্গেট ছিল টালা ট্যাঙ্ক। ইতিহাসকে সাক্ষ‍্য করে এখনও তিলোত্তমার বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সুবিশাল ঐতিহ্য। টালা ট্যাঙ্কের বর্তমান বয়স ১১০ বছর। আজও কত শত পরিবারের নিত‍্যদিনের ভরসা এই ট‍্যাঙ্ক।