শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

‘গভীর শোক প্রকাশ করছি, ঐন্দ্রিলার মৃত্যু অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি’, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২, ০৪:৪০ পিএম | আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২২, ১০:৪০ পিএম

‘গভীর শোক প্রকাশ করছি, ঐন্দ্রিলার মৃত্যু অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি’, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
‘গভীর শোক প্রকাশ করছি, ঐন্দ্রিলার মৃত্যু অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি’, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ থেমেছে ২০ দিনের কথন লড়াই। মাত্র ২৪ এই নিভে গেল ঐন্দ্রিলার জীবনজ্যোতি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু থেকে অসংখ্য অনুরাগী। টেলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ঐন্দ্রিলার পরিবার, পরিজন এবং অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি মৃত্যুর সঙ্গে ঐন্দ্রিলার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ (নবান্ন) থেকে প্রকাশিত নাতিদীর্ঘ ওই শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বিশিষ্ট অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার অকাল-প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ হাওড়ায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রতিশ্রুতিময়ী তরুণী এই অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি সিরিয়াল ঝুমুর, মহাপীঠ তারাপীঠ, জীবনজ্যোতি, জীবনকথা, জিয়নকাঠি ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে এবছর ‍‍`অসাধারণ প্রত্যাবর্তন‍‍` বিভাগে টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। মারণরোগের বিরুদ্ধে অদম্য মনোবল নিয়ে তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ট্রাজিক প্রয়াণ অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি। আমি ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”

টানা ২০ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে এক অসম লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। তবে, শেষপর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ, রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রবিবার সকালে পর পর কমপক্ষে ১০ বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। এবার আর চিকিৎসকদের চেষ্টায় সাড়া দিলেন ‘লড়াকু’ ঐন্দ্রিলা।

শনিবার সকালেও হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ঐন্দ্রিলা এখনও ১০০% ভেন্টিলেশনেই রয়েছেন। ওষুধ দিয়ে তাঁর রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছিল। পর পর ২ বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আবার শুটিং ফ্লোরেও ফিরেছিলেন।

এবছর দীপাবলির সন্ধ্যাতেও সেজেগুজে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোকময় ছবি পোস্ট করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু তার ১ সপ্তাহের মাথাতেই ১ নভেম্বর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁর শরীরের একটা দিক অসাড় হয়ে পড়ে। ঘন ঘন বমি করতে থাকেন। অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার ও বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার হয় ঐন্দ্রিলার। তখন থেকেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন। মাঝে একবার তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, শরীরে সংক্রমণ বাড়লে ফের সি-প্যাপ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মাঝে বাঁ হাত ও চোখের পাতা একটু নাড়ালেও, জ্ঞান ফেরেনি। একরকম কোমাচ্ছন্নই ছিলেন তিনি।

গত মঙ্গলবার থেকে অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হতে শুরু করে। মস্তিষ্কের কিছু জায়গায় নতুন করে রক্ত জমাট বাঁধার খবর আসে। এরপর গত বুধবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। এই কঠিন সময়ে ঐন্দ্রিলার পাশে সবসময় ছিলেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলা এবং সব্যসাচীর সম্পর্ক সকলের কাছেই উদাহরণস্বরূপ। বন্ধুত্ব, ভালোবাসার পাঠ শিখিয়েছে বারবার তাঁদের সম্পর্ক। তাঁদের সেই সম্পর্কের কাছে মৃত্যুও হার মেনেছে বারে-বারে। সব্যসাচী চৌধুরী ও ঐন্দ্রিলা শর্মার সম্পর্ক এমনই সুরে সাজানো। তবে, আজ সেই রূপকথা যেন তাসের দেশের মতো ভেঙে পড়ল। সকলের সমস্ত চেষ্টা, প্রার্থনা ব্যর্থ করে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। নবান্নের হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে অবশেষে থামল লড়াই। হাজার চেষ্টা করেও কোমা থেকে তাঁকে আর ফেরানো গেল না। রবিবারই প্রয়াত হলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ব্যোন ম্যারো ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। সেই সময় দিল্লিতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ছিলেন তিনি। লড়াই করেছিলেন এই কর্কট রোগের সঙ্গে এবং জয়ীও হয়েছিলেন। এরপর টলিউডের যাত্রা শুরু তাঁর। একাধিক হিট মেগায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন নৃত্যশিল্পীও। কালার্স বাংলার ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে বাংলা টেলিভিশনের জগতে নিজের অভিনয় যাত্রা শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। স্টার জলসার ‘জীবন জ্যোতি’ ধারাবাহিকেও মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার সান বাংলার ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তুলির ভূমিকায়। বহুদিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একবার নয় দু-দু’বার মারণ রোগ থাবা বসিয়েছে তাঁর শরীরে। তবে, দু’বারই ক্যানসারকে হার মানিয়েছেন অভিনেত্রী। ২০১৫ সালের পর, ফের ২০২১ সালে ফের তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। আরও একবার লড়াই শুরু করেন মারণ রোগের বিরুদ্ধে। এবার পাশে পেয়েছিলেন বন্ধু সব্যসাচীকে।

ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর ২০ দিনের লড়াইয়ে সবসময় হাসপাতালেই ঐন্দ্রিলা পাশে ছিলেন সব্যসাচী। তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘মেয়েটা লড়ে যাচ্ছে, সাথে লড়ছে একটা গোটা হাসপাতাল। নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এর অন্যথা কিছু হবে না’। কিন্তু তা আর হল না। অবেশেষে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চিরতরে চলে গেলেন প্রতিশ্রুতিময়ী এই অভিনেত্রী।