শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

‘আমার মেয়ের পাশ করা আছে, সার্টিফিকেটও আছে’! মুখ খুললেন অনুব্রত

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২২, ০১:৩০ পিএম | আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২২, ০৭:৩০ পিএম

‘আমার মেয়ের পাশ করা আছে, সার্টিফিকেটও আছে’! মুখ খুললেন অনুব্রত
‘আমার মেয়ের পাশ করা আছে, সার্টিফিকেটও আছে’! মুখ খুললেন অনুব্রত

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রাথমিকে বেয়াইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল-সহ মোট ৬ জনকে তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আজ দুপুরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজিরা দেওয়ার কথা তাঁদের প্রত্যেকের। এদিকে আজ সকালেই বোলপুরের বাড়ি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। সুকন্যার পাশাপাশি রওনা দিয়েছেন অনুব্রতর ভাইপো সাত্যকি মণ্ডলও। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, টেট পাশ না করেও, তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরি করছেন। আজ এই অভিযোগের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন খোদ অনুব্রত মণ্ডল। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ে প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ।

উল্লেখ্য, মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের চাকরিতে নিয়োগ বিতর্কে এই প্রথম মুখ খুললেন কেষ্ট। মুখ খুলেই তিনি দাবি করেছেন যে, মেয়ে টেট পাশ করেছে। এদিন আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, ‘আপনার মেয়েকে আদালত ডেকেছে, কী বলবেন?’ সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে প্রথমে মেজাজ হারান বীরভূমের তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা। পরে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মেয়ে ভাল আছে। আমার মেয়ের পাশ করা আছে। সার্টিফিকেট আছে। চিন্তার কারণ নেই।’ পাশাপাশি তিনি আর বলেন যে, ‘যা বোঝার আদালত বুঝবে। তলব করেনি মেয়েকে। নথি জমা দিতে বলেছে।’

গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পরই, মেয়ে সুকন্যার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো হয় যে, টেট পাশ না করেই চাকরি করছেন সুকন্যা মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে টেট পাশ না করেই চাকরি পাওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি এও অভিযোগ আছে যে, তিনি নাকি স্কুলেও যান না। স্কুলে না গিয়েই প্রত্যেক মাসে বেতন পান। এছাড়াও বাড়িতে রেজিস্টার এনে সই করানোর মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। তার জন্যই আদালত সুকন্যা মণ্ডলকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে বুধবার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়ে সুকন্যার চাকরির বিষয়টি আদালতে জানান। সেটা শুনেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আজ দুপুরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, বোলপুরের কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন সুকন্যা। ২০১৪ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। ফিরদৌস শামিমের দাবি করেছেন যে, তিনি কোনোদিন স্কুলে যাননি। তাঁদের বারিতেই হাজিরার খাতা পাঠানো হত। স্কুলে না যাওয়ার পরেও, প্রতি মাসে ঠিকমতো বেতন পেয়ে যেতেন। এই তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি সুকন্যা-সহ আর ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরা হলেন, অনুব্রতর ভাই সুমিত মণ্ডল, আপ্তসহায়ক অর্ক দত্ত, ভাইপো সাত্যকী মণ্ডল, তৃণমূল নেতা ঘনিষ্ঠ কস্তুরী চৌধুরী, সুজিত বাগদি।

প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা ১২ টা বেজে ১৭ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল পৌঁছান বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’র বাড়িতে। জানা গিয়েছে, এদিন একাধিক নথি নিয়ে বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের জেরার মুখোমুখি হতে রাজি হননি সুকন্যা। অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করার পরই তাঁর সম্পত্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। তদন্তে উঠে আসে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার নাম। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা সুকন্যার সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে সিবিআই আধিকারিকদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। সামান্য স্কুল শিক্ষিকার এতো সম্পত্তি কীভাবে হল? এই প্রশ্নই তদন্তকারী আধিকারিকদের ভাবাচ্ছে। সিবিআই সূত্রের খবর, সুকন্যা মণ্ডলের নামে এখনও পর্যন্ত বোলপুরেই দশটি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই প্রতিটি সম্পত্তিই ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে। এই কারণেই সন্দেহ বেড়েছে তদন্তকারী আধিকারিকদের।

সিবিআই-এর আধিকারিকদের জেরা করতে দিতে রাজি হননি সুকন্যা। সুকন্যা জানিয়েছেন, ‘আমি কথা বলার অবস্থায় নেই, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সদ্য মা-কে হারিয়েছি। বাবা সিবিআই হেফাজতে।’ এই কারণেই ১০ মিনিট পরেই বেরিয়ে যান সিবিআই-এর আধিকারিকরা।