শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

রয়ে গেল সাত বছরের শিশু কন্যা! মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুর পরেও অনেকের প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসক সংযুক্তা রায়

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২২, ০৪:৩০ পিএম | আপডেট: মে ৪, ২০২২, ১০:৩০ পিএম

রয়ে গেল সাত বছরের শিশু কন্যা! মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুর পরেও অনেকের প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসক সংযুক্তা রায়
রয়ে গেল সাত বছরের শিশু কন্যা! মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুর পরেও অনেকের প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসক সংযুক্তা রায়

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বয়স মাত্র ৪৩ বছর। জীবনের অর্ধেক সময় পেরোনোর আগেই জীবন প্রদীপ নিভে গেল চিকিৎসক সংযুক্তা শ্যাম রায়ের। ৭ বছরের শিশুকন্যাকে একা রেখেই মঙ্গলবার সকালে সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন সংযুক্তা। একসময়ে দাপুটে এই চিকিৎসক পেশাদারিত্বের সঙ্গে সামলেছেন বহু ক্রিটিক্যাল কেস। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকা রোগীর চিকিৎসায় হাত লাগিয়েছেন তিনি। আর আজ প্রাণবন্ত সেই মহিলা চিকিৎসকই নাকি নেই! একথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীরা। তবুও মৃত্যুর পরে অঙ্গদানের মাধ্যমে সংযুক্তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন পরিবারের সদস্যরা। বুধবারই সম্পন্ন হয়েছে অঙ্গদান পর্ব।

১৯৯৯ সালে শিয়ালদা এন আর এস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করেন সংযুক্তা। এরপর অ্যানাসথেসিয়া নিয়ে এমডি করে পরবর্তীকালে ইএম বাইপাস সংলগ্ন অ্যাপোলো হাসপাতালে অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে কাজে যোগদান করেন। বহু জটিল অস্ত্রোপচার দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সংযুক্তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। বিশেষ করে ব্রেনের মতো কঠিন অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অ্যানাসথেসিয়া করতে যেখানে প্রবীণ চিকিৎসকদেরও হাত কাঁপে, সেখানে সংযুক্তার কাছে তা বাঁ হাতের কাজ ছিল। আজ পর্যন্ত তাঁর কাজের খুঁত কেউ বের করতে পারেনি।

গত শুক্রবার রাজারহাট নিউটাউনে নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন সংযুক্তা। দ্রুতই তাঁকে ইএম বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময় মতই শুরু হয় চিকিৎসা। চিকিৎসকরা সাধ্যমত সমস্ত রকম চেষ্টা করার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে সংযুক্তার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। মাতৃহারা হয় সাত বছরের শিশুকন্যা। এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও সংযুক্তার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা চান মৃত্যুর পরেও একাধিক মানুষের মধ্যে বেঁচে থাক সংযুক্তা।

এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে রিজিওনাল অর্গান এন্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অরগানাইজেশন বা রোটো-র সঙ্গে। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় সংযুক্তার হৃদপিণ্ড দান করা যায়নি। তবে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংযুক্তার লিভার, দুটি কিডনি এবং চোখ দান করার মতো অবস্থায় রয়েছে। এরপরই কোন রোগীর কোন অঙ্গের প্রয়োজন রয়েছে তার খোঁজখবর শুরু করে রোটো।

মঙ্গলবার রাতেই মেলে ম্যাচিং গ্রহীতার খোঁজ। সেইমতো বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয় তোড়জোড়। সংযুক্তার লিভার পেয়েছেন অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। অন্যদিকে একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হবে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে। অপর একটি কিডনি জামশেদপুরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী এক তরুণী শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে। এই কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া চলবে দমদম আইএলএস হাসপাতালে। অন্যদিকে চোখ বা কর্নিয়া যাবে দিশা আই হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে।

সহকর্মীকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। তবুও এই ঘটনাকে কুর্নিশযোগ্য বলে মনে করেছেন রাজ্যের সর্বস্তরের চিকিৎসকরা। এক চিকিৎসকের পরিবার হিসেবে যেভাবে সংযুক্তার পরিবার অঙ্গদান করে সমাজকে সচেতনতার বার্তা প্রদান করলেন তা নিঃসন্দেহে সকলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। এই প্রসঙ্গে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে এক চিকিৎসক বলেন, মাত্র সাত বছরের সন্তানকে রেখে চিকিৎসক মায়ের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবুও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসকরা যেভাবে লড়াই চালিয়ে যান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনা। শোকের মাঝেও সংযুক্তার পরিবার যেভাবে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সত্যিই কুর্নিশযোগ্য।