সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা! পুজোর আগেই রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে ডেঙ্গুর বিপজ্জনক ভ্যারিয়্যান্টের

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ০৩:৪২ পিএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ১০:০৭ পিএম

চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা! পুজোর আগেই রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে ডেঙ্গুর বিপজ্জনক ভ্যারিয়্যান্টের
চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা! পুজোর আগেই রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে ডেঙ্গুর বিপজ্জনক ভ্যারিয়্যান্টের / প্রতীকী ছবি

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। তারপরেই বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। এদিকে পুজোর মুখে ফের চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। রাজ্যের মধ্যে কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। জ্বর নিয়ে তিনি দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

জানা গিয়েছে, গত ২ দিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। জ্বর না কমার কারণে তিনি পরীক্ষা করান। সেই রিপোর্ট আসতেই দেখা যায় যে, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা এবং শরীরে জলের মাত্রার দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। শুধু যে শহর কলকাতা, তাই নয়, অন্যান্য জেলাতেও বাড়ছে সংক্রমণ। ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যের ১৮ টির বেশি ব্লকে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। আগে শুধুমাত্র দাপট দেখাচ্ছিল ডেঙ্গ-৩ ভ্যারিয়্যান্ট। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য কর্তাদের চিন্তা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে ক্রমশ সংক্রমণের হার বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু-২। সাধারণত ডেঙ্গুর ৪ রকমের প্রজাতিই ঘুরে ফিরে তাদের দাপট দেখিয়ে থাকে। কোন সেরোটাইপয়ের দাপট বেশি, তার উপর নির্ভর করে রাজ্যের সার্বিক ডেঙ্গুর চিত্র। জানা গিয়েছে কিছুদিন, আগে পর্যন্ত প্রভাব দেখা যাচ্ছিল ডেঙ্গু-৩-এর। এর প্রভাবে সাধারণত প্লেটলেট কমে গিয়ে রোগীর বিপদ দেখা দিতে পারে।

কিন্তু, সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, প্রভাব বাড়ছে ডেঙ্গু-২-এরও। আর এটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। কারণ, ডেঙ্গির এই প্রজাতি রোগীর একাধিক অঙ্গে হানা দিয়ে শক সিন্ড্রোম ডেকে আনে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের রোগীকে বাঁচানোর জন্য আর কিছুই করার থাকে না। এর আগে ২০১৯ সালে এই প্রজাতির ডেঙ্গি-ই দাপট দেখিয়েছিল রাজ্যে। রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল শতাধিক মানুষের। চলতি বছরেও গত দু-তিন সপ্তাহে অধিকাংশ ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে শক সিন্ড্রোমের জেরে।

এদিকে, চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের সার্বিক ডেঙ্গু সেরোটাইপিংয়ের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু-৩ হয়েছে শতকরা ৫২ শতাংশ মানুষের। ডেঙ্গু-২-এর শিকার শতকরা ৩৪ শতাংশ মানুষ। আর ডেঙ্গু-১ হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ মানুষের। ডেঙ্গু-৪-এর শিকার মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ। এই মাসে আরও ৫০টি নমুনা সেরোটাইপিংয়ের জন্য নাইসেডে পাঠানো হয়। সেখানকার রিপোর্ট বলছে, তার মধ্যে ডেঙ্গু-৩-এ আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি, ৬০ শতাংশ মানুষ। ডেঙ্গু-২ প্রজাতিতে আক্রান্ত ২০ শতাংশ। আর ডেঙ্গু-১- এবং ডেঙ্গু-৪-এ আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম।

সেই জন্যই জ্বর, বমি, মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখলেই, রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ চিকিৎসকদের। দরকার পড়লে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। হাওড়া, বালি, শ্রীরামপুর, দক্ষিণ দমদম, কামারহাটি, বিধাননগরে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

অন্যদিকে, এই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ‌্য দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীদের পুজোর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘কিছু এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। তাই পুজোর সময়ও পুরসভার স্বাস্থ‌্য বিভাগ খোলা থাকবে। স্বাস্থ‌্য আধিকারিক ও কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আপৎকালীন বিভাগ যেমন নিকাশি, কঠিন ও বর্জ‌্য, এইসব দপ্তরও খোলা থাকছে। তর্পণের জন‌্য পুর কর্মীদের অফিস টাইমে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টার বদলে ১১.৩০ মিনিটে কর্মীরা প্রবেশ করতে পারবেন।’