শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

জরাজীর্ণ অবস্থায় আজ‌ও ক্লাইভের অত্যাচারের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে কলকাতার ক্লাইভ হাউস

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২২, ১১:২১ পিএম | আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২২, ০২:৩৪ এএম

জরাজীর্ণ অবস্থায় আজ‌ও ক্লাইভের অত্যাচারের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে কলকাতার ক্লাইভ হাউস
জরাজীর্ণ অবস্থায় আজ‌ও ক্লাইভের অত্যাচারের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে কলকাতার ক্লাইভ হাউস

ক্লাইভ হাউজ নামটা শুনলেই যেন চোখের সামনে ফুটে ওঠে এক টুকরো ইউরোপের ছবি! আর একটি অত্যাচারী মুখ! আজ‌ও কল্লোলিনী কলকাতার বুকে ভারতবর্ষের ওপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই ক্ষয়িষ্ণু বাড়িটি! বাংলার স্থাপত্যের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন এটি।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার দাপুটে নবাব সিরাজৌদোল্লাকে পরাজিত করে এই বাড়িটির দখল নেন রবার্ট ক্লাইভ। তখন থেকেই এই বাড়ি পরিচিত হয় ক্লাইভ হাউস নামে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর‌ও যার নাম বদল হয়নি।  ইংল্যান্ডের অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের সন্তান রবার্ট ক্লাইভ সামান্য কেরানি হিসেবে ১৭৪৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগ দেন এবং সেই বছরেই তিনি কোম্পানির ব্যবসার কাজে ভারতে আসেন। এই দেশে এসে কিছু দিন চাকরির পর ফের তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ভারতে আসেন ১৭৫৬ সালে। আর এরপর‌ই ভারতের মাটিতে পা দিয়ে বাংলা-বিহার উড়িষ্যায় ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের জন্য কূটকৌশল চালাতে থাকেন। আর এরপর‌‌ই তিনি মীর জাফর এবং তার মিত্রদের সহায়তায় সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পলাশীর যুদ্ধে তাকে পরাস্ত করেন।

১৭৫৭ সালে ঘটে যাওয়া পলাশীর যুদ্ধের সেই খলনায়ক রবার্ট ক্লাইভ ও তার অত্যাচারী ইংরেজ শাসনের ইতিহাসকে আজ‌ও বয়ে নিয়ে চলেছে এই বাড়িটি। তবে প্রাচীন এই বাড়িটি আজ ইতিহাসের ভারে জরাজীর্ণ।   গোটা বাংলা জুড়েই ব্রিটিশ শাসনের নিদর্শন চোখে পড়ে। কলকাতার বুকে এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্য হল দমদমের ক্লাইভ হাউস। দমদমের নাগের বাজার মোড় থেকে মাত্র পায়ে হাঁটা দূরত্বে আজও দাঁড়িয়ে আছে আজ‌ও ইতিহাসকে নিজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রেখেছে ২৭০ বছরের পুরনো এই বাড়িটি।

ইতিহাসে মোড়া এই বাড়িটি পলাশীর যুদ্ধের নায়ক মেজর জেনারেল রবার্ট ক্লাইভের বাগানবাড়ি হিসেবেই পরিচিত সাধারণে । শোনা যায়, দমদমের ওই এলাকা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই একতলা এই বাড়িটি আবিষ্কার করেন তিনি। পরবর্তীকালে তিনি এই বাড়িটি দ্বিতল বাড়িতে পরিণত করেন। রবার্ট ক্লাইভের এই বাড়ি বড়কুঠি নামে পরিচিত। বলা হয় ডাচ বা পর্তুগিজ বণিকদের গুদামঘরও ছিল বাড়িটি।  

জরাজীর্ণ অবস্থা হয়ে গেলেও ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাড়িটি আজও সেই পুরনো ইতিহাসকে বয়ে নিয়ে চলেছে।  দেশভাগের পর ব্রিটিশরা চলে গেলে এই বাড়িটি মালিকানাহীন হয়ে পড়ে। আর তারপরই সেখানে আশ্রয় নেয় দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তু পরিবার।  আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই বাড়িটি সংস্কারের দায়িত্ব নেয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ।   যদিও পরে সেই কাজ থমকে যায়। সম্প্রতি আবারও কাজ শুরু করেছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ।