শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

প্রথম সমকামী বিবাহের সাক্ষী শহর কলকাতা! প্রেমিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন ফ্যাশন ডিজাইনার

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২২, ০৭:৫৬ এএম | আপডেট: জুলাই ৫, ২০২২, ০১:৫৬ পিএম

প্রথম সমকামী বিবাহের সাক্ষী শহর কলকাতা! প্রেমিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন ফ্যাশন ডিজাইনার
প্রথম সমকামী বিবাহের সাক্ষী শহর কলকাতা! প্রেমিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন ফ্যাশন ডিজাইনার

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আমাদের দেশে সমকামিতা এখন আর কোনও অপরাধ নয়। দীর্ঘদিন হল বাতিল হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ (decriminalisation of 377) ধারা। কিন্তু সমকামিতা নিয়ে সেই পুরনো বস্তাপচা মানসিকতা এখনও পোষণ করে চলেছেন অধিকাংশ মানুষই। সমকামিতা মানে কিছুটা লুকোচুরি। সমকামিতা মানেই এখনও সমাজ থেকে কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। কিন্তু ভালোবাসা যে সত্যিই কোনও বাধা মানে না! তাই খোদ কলকাতার বুকেই দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য। মাথায় টোপর, বিয়ের শেরওয়ানি পড়ে মন্ডপে হাজির হলেন বর। হল শুভদৃষ্টি, মালা বদলও। কেবল পাত্রীর জায়গায় ছিল পাত্র। নিজের প্রেমিক চৈতন্য শর্মার সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধলেন ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক রায়।

অভিষেক রায় বেশ নামকরা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তাঁর প্রেমিক চৈতন্য তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। তিনি গুরুগ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে কলকাতা থেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন। অন্যদিকে আমাদের দেশে সমকামিতা বৈধ হলেও সমকামী বিবাহ এখনও আইনি স্বীকৃতি পায়নি। তবুও অভিষেক এবং চৈতন্যর বিয়েতে রইল না কোনও ত্রুটি। রীতিমত হিন্দু ধর্মের রীতি মেনে, অগ্নিকে সাক্ষী করেই সাত পাকে বাঁধা পড়লেন যুগল। এই আনন্দ-অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন তাঁদের পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধরা। পরিবারকে সামনে রেখেই একে অপরের সঙ্গে সারাজীবন পথ চলার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন অভিষেক এবং চৈতন্য।

এই প্রথম সমকামী বিবাহের সাক্ষী রইল শহর কলকাতা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই বিবাহকে কেন্দ্র করে শহরবাসীর মধ্যে উৎসাহের কমতি ছিল না। কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে বসেছিল অভিষেক-চৈতন্যর বিবাহ বাসর। বিবাহ অনুষ্ঠান আলোকিত করে তুলতে হাজির হয়েছিলেন একঝাঁক তারকা। উপস্থিত ছিলেন নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শংকর এবং তাঁর কন্যা শ্রীনন্দা শংকর। ছিলেন দুই পোশাকশিল্পী দেব আর নীলও। এছাড়াও এদিন উপস্থিত থাকতে দেখা যায় রূপটানশিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদারকেও।

অভিষেক এবং চৈতন্যর বিবাহ আসর ঘিরে উচ্ছসিত হয়ে পড়েন অনিরুদ্ধ চাকলাদার। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, এদিন অত্যন্ত যত্ন সহকারেই বসেছিল বিবাহ বাসর। রীতিমতো বাড়ি গিয়ে কার্ড দিয়ে তাঁকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অভিষেক এবং চৈতন্য। বর্তমানে চরম ব্যস্ততার মাঝে যা একেবারে দেখা যায় না বললেই চলে। বিয়ের আয়োজনে ছিল না কোনও ত্রুটি। তাঁর মতে, সমকামী বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পেলে অনেক জটিলতা কেটে যাবে। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা যে কোনও আইনি বাধা মানে না, অভিষেক এবং চৈতন্যর বিবাহ সেটিই প্রমাণ করে।

অন্যদিকে বিয়ের আসরে আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন নভনীল দাস। অভিষেক-চৈতন্য র বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুকে লেখেন, “বন্ধু অভিষেক রায়ের বিয়ের সাক্ষী ছিলাম। বিয়ের রীতিতে তেমনভাবে বিশ্বাস না করলেও সুন্দর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে খুশি। প্রকৃত অর্থেই বরমালা পরলেন দুই বর। আমি উপলব্ধি করলাম সকলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ভালোবাসাকে বোঝা উচিত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেউ কেউ ফিসফিস করলেন, কেউ অবাক হলেন আবার অনেকেই উচ্ছ্বসিত হলেন। কলকাতা শহরে পাঁচ বছর আগেও হয়ত এই জিনিস ভাবা যেত না। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হল অভিষেক এবং চৈতন্যর ভালোবাসার।”