শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

‘দাম কমবে বিদ্যুতের’! একুশের সভামঞ্চ থেকে আশ্বাস তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২২, ০৩:৩৩ পিএম | আপডেট: জুলাই ২১, ২০২২, ০৯:৫৩ পিএম

‘দাম কমবে বিদ্যুতের’! একুশের সভামঞ্চ থেকে আশ্বাস তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার
‘দাম কমবে বিদ্যুতের’! একুশের সভামঞ্চ থেকে আশ্বাস তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ একুশে জুলাই। তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। দলের কাছে এই দিনটা এক ঐতিহাসিক দিন। আজ, ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ হয়ে গেল কলকাতায় ধর্মতলার বুকে। করোনা অতিমারীর কারণে গত ২ বছর করা যায়নি ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ। কিন্তু এবার ঐতিহাসিক সেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল পুরনো জায়গা ধর্মতলাতেই। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে তৃতীয়বার বাংলার ক্ষমতা এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জয়ের পর প্রথম শহিদ দিবসের সমাবেশ ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।

এদিন সকাল থেকেই খেপে খেপে বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মঞ্চে ওঠেন তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে উঠতেই বৃষ্টি থামে। এদিন একুশের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপিকে কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ডাক দিলেন সরাসরি। এদিন তিনি সভামঞ্চ থেকে বলেন, ‘বৃষ্টি দেখে বিজেপি, সিপিএম হেসেছিল। ভেবেছিল তৃণমূলের মিটিংই শেষ হয়ে গেল! চব্বিশে মানুষের বৃষ্টিতে ভেসে চলে যাবে বিজেপি।’

সভামঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, ‘আমার মেরুদণ্ড সোজা। মাথা উঁচু করে চলি। ওদের মেরুদণ্ড বাঁকা। একদিকে সিবিআই, আরএকদিকে জিএসটি। বিজেপি সবজায়গায় সরকার ভাঙছে এটাই ওদের কাজ। বাংলাতেও সেই চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে ফ্রি তে রেশন পাবেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবেন, কন্যাশ্রী পাবেন, স্বাস্থ্যসাথী পাবেন, শিল্পীদের পেনশন, সবুজসাথী পাবেন। গ্রাম বাংলার কর্মীদের বলবো মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সারা ভারতে ৪৫ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে আর বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমে গিয়েছে। বাংলায় কৃষকদের আয় সবথেকে বেশি।’

রাজ্যে দাম কমবে বিদ্যুতের। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। কীভাবে কমবে দাম? এদিন মঞ্চ দাঁড়িয়ে সেই পথেরও সন্ধান দিলেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, দেউচা পাঁচামি থেকে যে পরিমাণ কয়লা তোলা হবে, তাতে কয়লার অভাব মিটবে। রাজ্যকে কয়লার জন্য আর অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। আর তাতেই দাম কমবে বিদ্যুতের। মমতার দাবি, ‘আমাদের একদিকে শিল্প, একদিনে কৃষি। ডানকুনি থেকে অমৃতসর করিডোর হচ্ছে। আসানসোল সেল গ্যাস পাওয়া গিয়েছে। দেউচা হয়ে গেলে বিদ্যুতের অভাব বাংলায় হবে না। আমরা বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারব।’

একুশের মঞ্চ থেকে বিদ্যুতের দাম কমার পাশাপাশি, তৃণমূল নেত্রী এটাও আশ্বাস দেন যে, জোর করে কারও কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। নেত্রীর কথায়, ‘আমাদের একদিকে শিল্প, একদিনে কৃষি। ডানকুনি থেকে অমৃতসর করিডোর হচ্ছে। আসানসোল সেল গ্যাস পাওয়া গিয়েছে। আদালতে মামলা চলছে তাই নইলে ১৭ হাজার জায়গা খালি আগে শিক্ষক নিয়োগে। আমি জানি রাস্তা কী করে বের করতে হয়। একদিক বন্ধ করলে আর একদিক খুলে যাবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কাজ করতে গেলে ভুল হয়। কিন্তু কেউ ইচ্ছে করে ভুল করলে সে শাস্তি পেত। সিপিএমের সময়ে ১০ লক্ষ টাকা ঘুস দিতে হত। এখন রাজ্যে ৫০০ শিল্প পার্ক আছে। পিএফের টাকা কোথায় যাচ্ছে?’ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ‘বিজেপি সিঙ্গল মেজরিটি পাবে না। চ্যালেঞ্জ করছি। বিজেপিকে হারাবেন? জীবন দিয়ে লড়াই করবেন? আবার এলাকায় লোক পাঠাতে শুরু করেছে। ভুঁইফোড় নেতা পাঠাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে, কী খাচ্ছে, কী দিচ্ছে, লক্ষ্য রাখবেন।’ 

অন্যদিকে, বাংলার নামে কেন প্রকল্প হবে না, এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মমতার দাবি, ‘গুজরাটের নামে হলে বাংলার নামে কেন প্রকল্প হবে না। বাংলাকে ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না। প্রয়োজনে দিল্লি ঘেরাও করব। আগামীদিনে নতুন কমিটি তৈরি হলে নতুন প্রকল্প হবে। ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখাবেন না। অবিলম্বে ১০০ দিনের টাকা দিন।’ 

এদিন একুশের সভামঞ্চ থেকে রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে নেত্রী বলেন, ‘মুম্বই ভেঙেছি, হরিয়ানা ভাঙব। এরপর ছত্তিশগড় ভাঙব, বাংলা ভাঙব। বলেছি, বাংলার কথা বলবেন না। এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে। আপনারা জঙ্গলমহল, পাহাড় এখনও দেখেননি। আমি চাইলে অনেকগুলো বিজেপির ভোট নিতে পারতাম আমি করিনি।’

অন্যদিকে, দলের নেতা- কর্মীদের সাবধান করে নেত্রী বলেন, ‘দলের নামে কেউ চাঁদা তুলবেন না। একুশে জুলাইয়ে দুটি কেস আমার কাছে এসেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বিজেপি জোট করবে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বিরোধীরা। ধর্মীয় কার্ড খেলছে বিজপি। অথচ আদিবাসীদের সারনা ধর্মে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তৃণমূলের নামে টাকা তুললে ধরে থানায় নিয়ে যান।’