শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

অনুব্রতকে আবারও নোটিস CBI-এর! কালই নিজাম প্যালেসে হাজিরার নির্দেশ

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২, ১০:১২ এএম | আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২২, ০৪:৩৯ পিএম

অনুব্রতকে আবারও নোটিস CBI-এর! কালই নিজাম প্যালেসে হাজিরার নির্দেশ
অনুব্রতকে আবারও নোটিস CBI-এর! কালই নিজাম প্যালেসে হাজিরার নির্দেশ

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রেহাই নেই। অনুব্রত মণ্ডল শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সোমবারের হাজিরা এড়ালেও, বুধবার ফের তাঁকে তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গোরু পাচার মামলায় আবারও নোটিস পাঠানো হল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। বুধবার সকাল ১১ টায় নিজাম প্যালেসে হাজির হতে বলা হয়েছে তাঁকে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ইমেল মারফৎ নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেই সিবিআই সূত্রে খবর। শুধুমাত্র ইমেল-ই নয়, এর পাশাপাশি নোটিসের হার্ডকপি পাঠানো হচ্ছে বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতেও। সিবিআই সূত্রে খবর, এবার হাজিরা এড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই নিয়ে ১০ বার তলব করে নোটিস পাঠানো হল অনুব্রত মণ্ডলকে। এর মধ্যে মাত্র একবারই তিনি হাজিরা দিয়েছেন। যদিও সেবার জিজ্ঞাসাবাদ অসম্পূর্ণ ছিল। তখনই তাঁকে বলা হয়েছিল যে, ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। তখন তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। সেই সূত্রেই তাঁকে সোমবার ডেকেছিল সিবিআই। কিন্তু সোমবার তিনি শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে এবং মেডিক্যাল চেকআপের প্রয়োজন আছে জানিয়ে সিবিআইকে জানিয়েছিলেন অনুব্রত আইনজীবী। সেই কারণে হাজিরা তিনি দিতে পারবেন না বলেই জানিয়েছিলেন। সিবিআই-এর কাছে সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আর অনুব্রতকে সময় দিতে নারাজ সিবিআই। 

নিজাম প্যালেসের পরিবর্তে তিনি গতকালই যান এসএসকেএম হাসপাতালে। সিবিআই-এর তলবে হাজিরা দেননি অনুব্রত মণ্ডল। একটি ইমেল মারফত অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এই কথা গতকালই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে বীরভূমের এই দাপুটে নেতার। সেই কারণে মেডিক্যাল চেকআপের প্রয়োজন রয়েছে তৃণমূলের এই নেতার। এমনটাই জানিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী। অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই-এর কাছে সময় চেয়েছিলেন। 

কিন্তু সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল যে, অনুব্রত মণ্ডলের ভর্তির প্রয়োজন নেই। গরু পাচার মামলায় তাঁকে তলব এড়িয়ে, তিনি সোমবার নিজাম প্যালেসে না গিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে যান। সোমবার সাড়ে ১২ টার কিছু আগে এসএসকেএম হাসপাতালে যান বীরভূমের এই দাপুটে তৃণমূল নেতা। তাঁর জন্য উডবার্নের ২১৬ নম্বর কেবিনও বরাদ্দ করা হয়েছিল।

জানা যায়, বীরভূমের এই দাপুটে নেতার ফিসচুলা ধরা পড়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর মাথার পিছনে ও ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে। তাই শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এমনটাই ইমেল করে সিবিআইকে জানানো হয়েছে এবং হাজিরার জন্য সময় চাওয়া হয়। এদিকে, সোমবার তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন ৭ জন চিকিৎসক। চিকিৎসকদের সেই দলে ছিলেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, কার্ডিও বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল, চেস্ট বিভাগের চিকিৎসক সোমনাথ কুণ্ডু, ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক দিলীপ পাল, এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসক শুভঙ্কর চৌধুরি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক।

কিন্তু সোমবার অনুব্রত মণ্ডলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, অনুব্রত মণ্ডলকে ভর্তির কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁর শারীরিক একাধিক সমস্যা থাকলেও, তার জন্য ভর্তির প্রয়োজন নেই। বাড়ি থেকেই চিকিৎসা সম্ভব। এরপর তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চিনার পার্কের বাড়িতে না গিয়ে বোলপুরে ফিরে যান। কিন্তু তারপরেও মিলল না রেহাই। ফের নোটিস দেওয়া হল তাঁকে। বুধবারই ফের তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছেন সিবিআই এবং ইডি-র আধিকারিকরা। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে অনুব্রত্র দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকেও। এই সায়গলও গোরু পাচার মামলায় জড়িত বলেই অভিযোগ। সায়গলের থেকেও প্রচুর তথ্য মিলেছে ইতিমধ্যেই এই মামলায়। এই সায়গল অনুব্রতর নাম করে গোরু পাচারের টাকা তুলত। উল্লেখ্য, গতকালই সায়গলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়েছে।  বীরভূমের একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের এক ঘনিষ্ঠ অনুচরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ১৭ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১০ টি মোবাইল-সহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। অনুব্রত মণ্ডলের জেলার এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও হানা দেয় দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বলে পরিচিত পাথর ব্যবসায়ী টুলু মণ্ডলের বাড়িতে একসঙ্গে তল্লাশি চালায় ইডি ও সিবিআই। অভিযোগ, গরু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত এই টুলু মণ্ডল। সেই তল্লাশি অভিযানেও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। এইসব মিলিয়ে, যাবতীয় তথ্যের উপর ভিত্তি করেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।