শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

মহালয়াতেই দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন! ‍‍`অন্যরকম পুজো‍‍`য় মেতে ওঠেন বাংলার এই গ্রাম

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২, ১০:৩২ পিএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২, ০৪:৩২ এএম

মহালয়াতেই দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন! ‍‍`অন্যরকম পুজো‍‍`য় মেতে ওঠেন বাংলার এই গ্রাম
মহালয়াতেই দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন! ‍‍`অন্যরকম পুজো‍‍`য় মেতে ওঠেন বাংলার এই গ্রাম

দুর্গা পুজো মানেই বাঙালির কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ আবেগ! বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব বলে কথা! তাই চারদিন ধরে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন সকলে। আর এই দুর্গা পুজোর আমেজ শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকে। সেদিন থেকেই পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে সূচনা হয় দেবী পক্ষের৷ তবে একথা জানেন কি এই বাংলারই এক গ্রামে মহালয়া দিনেই হয় দেবীর বোধন? শুধু তাই নয় সেই একইদিনে দেবীর বিসর্জনও হয়ে যায়। আশ্চর্যের তাই না!

ঠিক যে সময় থেকে পুজোর আমেজ শুরু হয়, তখনই আসানসোলের হীরাপুরের ধেনুয়া গ্রামে শেষ হয়ে যায় দেবীর পুজো। মহালয়ার দিনেই হয় দুর্গার বোধন থেকে বিসর্জন। বছরের পর বছর ধরে এই ভাবেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে ধেনুয়া গ্রামে। দামোদরের তীরে অবস্থিত এই গ্রামে‌ প্রতি বছরই দুর্গাপুজো হয় মহালয়ার দিনে। সমস্ত নিয়ম মেনে এক দিনেই শেষ হয় পুজো। ধেনুয়া গ্রামের পাশেই দামোদরের তীরে রয়েছে কালীকৃষ্ণ আশ্রম। সেখানেই হয় এক দিনের দুর্গাপুজো।

কথিত রয়েছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে আগত সন্ন্যাসী তেজানন্দ ব্রহ্মচারী এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। তারপর থেকেই মহালয়ার দিন এই আশ্রমে পূজিতা হন দুর্গা। আজও সেই রীতির বদল ঘটেনি। সন্ন্যাসীর অবর্তমানে এখন আশ্রমের এই পুজোর ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন গ্রামবাসী থেকে আশ্রমের সেবাইতরা। তাঁরাই জানান, সাধারণ দুর্গাপুজোর নিয়মেই নবপত্রিকাকে স্নান করানো থেকে শুরু করে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো এবং দশমীর পুজো হয়। এরপর একইদিনে ঘটের সুতো কেটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

এখানে দেবী রূপও চিরপরিচিতা সন্তান পরিবেষ্টিত নয়৷ ধেনুয়া গ্রামের পুজোয় মা দুর্গার সঙ্গে থাকেন না গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। বদলে মায়ের দু’পাশে থাকেন দুই সখী— জয়া এবং বিজয়া। এছাড়াও অসুরদলনী দুর্গার দশটি হাত ও হাতে সমরাস্ত্র থাকলেও সঙ্গে থাকে না মহিষাসুর। তাই এখানে মায়ের মুখে নেই কোনও ক্রুদ্ধ ভাব। বরং মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রশান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কুমারী দুর্গার এই বিশেষ রূপই কালীকৃষ্ণ আশ্রমের দুর্গাপুজোর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

বর্তমানে এই পুজো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে গৌরি কেদারনাথ মন্দির কমিটি। ২০০৩ সাল থেকে এই পুজো পরিচালনা করে আসছে কমিটি। ধেনুয়া গ্রামে কুমারী দেবীর পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। যুগলমন্ত্র জানা কোনও পুরোহিত এই পুজো করেন। এই মন্দিরে পশুবলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আগে কুমারী দুর্গার পুজোর জন্য বিশেষ নিয়ম চালু ছিল ধেনুয়া গ্রামে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ২১ জন কুমারী মেয়ে, পুজোর আয়োজন করত। তবে এখন সেই নিয়মে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

তবে আজও পূর্বনির্ধারিত সব রীতি রেওয়াজ মেনে হয় ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো। স্থানীয় মানুষের এই পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহ থাকে তুঙ্গে। দূরদূরান্ত থেকেও এই পুজো দেখতে ছুটে আসেন অনেকে। সকলেই চেষ্টা করেন, একদিনের পুজোতে চারদিনে উপভোগ করতে। পুজোর দিনে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন সকলে। তবে মাতৃপক্ষের সূচনার দিনে দেবীর বিসর্জন কাঁদিয়েও যায় ধেনুয়া গ্রামের মানুষকে।