শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

‘অগ্নিপথ’-এর আঁচে পুড়ছে দেশ! একাধিক ট্রেন আগুন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মথুরায় পুলিশের গুলি

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২, ০৪:২৩ পিএম | আপডেট: জুন ১৭, ২০২২, ১০:২৩ পিএম

‘অগ্নিপথ’-এর আঁচে পুড়ছে দেশ! একাধিক ট্রেন আগুন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মথুরায় পুলিশের গুলি
‘অগ্নিপথ’-এর আঁচে পুড়ছে দেশ! একাধিক ট্রেন আগুন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মথুরায় পুলিশের গুলি

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কেন্দ্রের মোদী সরকারের ‘অগ্নিপথ’-প্রকল্পের আঁচে পুড়ছে গোটা দেশ। মোদী সরকারের এই প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দেশের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। তা কী এই প্রকল্প? ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্বল্প মেয়াদে চুক্তির ভিত্তিতে সেনা নিয়োগ করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে প্রায় ৪৬,০০০ তরুণকে নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’।

কিন্তু এই মুহূর্তে এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে জ্বলছে গোটা দেশ। বিক্ষোভ ক্রমশ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের মধ্যে ৯ রাজ্যে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ট্রেনে আগুন লাগানো, রেল অবরোধ চলছে। সেনায় চুক্তির ভিত্তিতে কাজ পেতে রাজি নয় আন্দোলনকারীরা। এইসব রাজ্যে আন্দোলনকারীদের দাবি, এই প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুন কেন্দ্র। বিহার প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে। এই মুহূর্তে এই প্রকল্পের কারণে বিহারের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। সড়ক-রেল অবরোধ করা হচ্ছে। ট্রেনে আগুন ধরিয়েছে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে ইতিমধ্যে একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, আবার কিছু ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। 

মথুরায় সাধারণ মানুষের উপর পাথরবাজির অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ, এমনটাই খবর। আবার দানাপুর স্টেশনে দানাপুর-ফারাক্কা এক্সপ্রেস, সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস-সহ অন্যান্য ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, সেখানেই একদল বিক্ষোভকারী ২৫ টি চার চাকার গাড়ি এবং ৬০ টি বাইকে ভাঙচুর চালিয়েছে। 

এদিকে, পাটনার জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রায় ১৫০০ বিক্ষোভকারী এই তাণ্ডব চালিয়েছে। সিসি ক্যামেরা দেখে ইতিমধ্যেই তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে খবর। 

অন্যদিকে, সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনেও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। চার, পাঁচটি ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন লাগানো হয়েছে, ২-৩টে কোচেও আগুন লাগানো হয়েছে বলেই খবর। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটাতে পাল্টা লাঠিচার্জ করে। পরে পুলিশ এবং রেলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জ্বলন্ত কামরাগুলি। বিহার,উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা-সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। শুধু রেল স্টেশনে হামলাই নয়, রাস্তায় রাস্তায় অবরোধের পাশাপাশি বিহারে উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া মাধেপুরে বিজেপি পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।

এদিন সকালেই বিহারের লখিসরাই ও আরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের দুটি কামরায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আবার মোহিউদ্দিন নগরে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে ট্রেনের দুটি কামরায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বারাণসীতেও বাসের উপর পাথর ছোড়া হয়। এই বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে বাংলাতেও। বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ চলছে। ঠাকুরনগরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। এদিকে, আজই এই বিক্ষোভের জেরে ২০২২ সালের জন্য অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করা হল। যা প্রথমে ছিল ১৭ থেকে ২১ বছর। তাও প্রশমিত হচ্ছে না বিক্ষোভের আগুন। 

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের এই নয়া ‘অগ্নিপথ’ অনুযায়ী, এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে প্রায় ৪৬,০০০ তরুণকে নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’।  ‘অগ্নিবীর’দের মাত্র ৪ বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীকালে ইচ্ছুকদের স্থায়ীকরণ করা হবে। তবে, তা মাত্র ২৫ শতাংশ। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই অস্থায়ী চাকরির মাধ্যমে ‘নিয়মিত ক্যাডার সেবায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদনের সুযোগ’ থাকছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া পড়ুয়ারা। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন এবং ৪ বছরের মেয়াদ শেষে এককালীন ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। 

সূত্রের খবর, ৪ বছর পর এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া জওয়ানরা স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট। তবে, অবসরের পরে ওই অগ্নিবীররা পাবেন না কোনও অবসরকালীন সুযোগ- সুবিধা। এমনকি অন্য চাকরির ক্ষেত্রে ‘প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলেও উল্লেখ করা যাবে না। এর পাশাপাশি তাঁরা পাবেন না পেনশন, গ্র্যাচুইটির সুবিধা।