শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

উদ্ধব সিংহাসন ছাড়তেই বিজেপি শিবিরে খুশির হাওয়া! মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কি এই নেতা?

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২, ১০:০৮ এএম | আপডেট: জুন ৩০, ২০২২, ০৪:২৪ পিএম

উদ্ধব সিংহাসন ছাড়তেই বিজেপি শিবিরে খুশির হাওয়া! মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কি এই নেতা?
উদ্ধব সিংহাসন ছাড়তেই বিজেপি শিবিরে খুশির হাওয়া! মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কি এই নেতা?

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ গতকালই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সেই সঙ্গে গতকালই বিগত কয়েকদিন ধরে চলা মহারাষ্ট্রের মহানাটকের সমাপ্তি ঘটেছে। আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর আসন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এখন বিজেপি শিবিরে খুশির হাওয়া। 

আজই আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে সেই সিদ্ধান্ত খারিজের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালতে সেই মামলার শুনানি যখন শুরু হয় গতকাল, তখনই মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন উদ্ধব ঠাকরে। সেই বৈঠকে শিবসেনার একাধিক মন্ত্রী অনুপস্থিত থাকলেও, ছিলেন এনসিপি এবং কংগ্রেসের বেশিরভাগ মন্ত্রী। 

সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার বৈঠকের শেষ তিন মিনিটে আবেগপ্রবণ উদ্ধব ঠাকরে নিজের ইস্তফার ইঙ্গিত দেন। সেই সঙ্গে আড়াই বছর ধরে সঙ্গে থাকার জন্য কংগ্রেস এবং এনসিপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। আগামী দিনেও তিনি এইরকম সাহায্য তাঁদের থেকে প্রার্থনা করেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর ছেলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের অনুকূলে না গেলে ইস্তফা দিতে পারেন উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু আখেরে সেই ইঙ্গিতই বাস্তবে সত্যি প্রমাণিত হয়। সুপ্রিম কোর্টে বুধবার প্রায় ঘণ্টা তিনেক সময় ধরে শুনানি চলে। 

রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে বলা হয় যে, আগামীকালই হবে আস্থা ভোট। এরপরই ইস্তফা দেন উদ্ধব ঠাকরে। ফেসবুক লাইভে বললেন, ‘নিজের লোকেরাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আস্থাভোটে যোগ দেব না’। এদিন ফেসবুক লাইভে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের আর্শীবাদ নিয়ে সরকার চালিয়েছি। শিবাজির আদর্শ মেনে কাজ করেছি। কৃষি ঋণ মকুবের চেষ্টা করেছি। রিকশা চালকদের মন্ত্রী-সাংসদ করেছি। কিন্তু সবকিছু দিয়েও তাঁদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি।’ শুধু মুখ্যমন্ত্রী পদ নয়, বিধান পরিষদের সদস্যপদও ছেড়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। তিনি জানিয়েছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

উদ্ধব ঠাকরেকে সরানোর পরিকল্পনা অনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। ২০১৯ সালে যখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেলেছিলেন তখনই তিনি বলেছিলেন ‘আমি ফেরত আসবই।’ তাঁর সেই কথাই তিন বছর পার হওয়ার আগেই সত্যি বলেই প্রমাণিত হল। উদ্ধবের ইস্তফার পর দেবেন্দ্র ফড়নবীশের একটি বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপ টুইট করা হয় মহারাষ্ট্রের বিজেপি-র টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রকাশ করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আমি আবারও ফিরে আসব। নতুন এক মহারাষ্ট্র গড়তে! জয় মহারাষ্ট্র।’

শোনা যাচ্ছে, শুক্রবারই নতুন সরকার গঠন হতে পারে। এরপরই জল্পনা শুরু হয় যে, কে হবেন মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? সেই জল্পনায় ইতিমধ্যেই নাম উঠে এসেছে দেবেন্দ্র ফড়নবীশের। একনাথদের বিদ্রোহ শুরুর নেপথ্যেও ছিলেন এই দেবেন্দ্রই। শিবসেনা নেতাদের মুম্বই থেকে সুরাতে এবং সেখান থেকে পড়ে অসমের গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার পেছনেও তাঁরই হাত ছিল। বলা হচ্ছে, উদ্ধব ঠাকরের সরকারকে কীভাবে গদিচ্যুত করা যায়, তার পরিকল্পনা তিনি ছকে দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে মাত্র ৮০ ঘণ্টার মধ্যে যখন তাঁর সরকার পড়ে যায়, সেই সময়ই তিনি বলেছিলেন যে, ‘আজ সময় আমার পক্ষে ছিল না। কিন্তু একদিন আবার ফেরত আসবই।’

সূত্রের খবর, ২০২০ সালেই উদ্ধব ঠাকরের সরকারকে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনার একের পর এক ঢেউ এবং উদ্ধব ঠাকরে অসুস্থ হওয়ায় সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে তা বাস্তবায়িত হল। উল্লেখ্য, বিগত ৯ দিনে ৩ বার দিল্লিতে উড়ে গিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। সেখানেই শীর্ষ নেতৃত্বদের সঙ্গে আলোচনা ও পরিকল্পনা করেই মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যতের স্থির করা হয়।