শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

মহারাষ্ট্রের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ‘বিদ্রোহী’ শিবসেনা নেতা একনাথ!

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২, ০৯:০২ পিএম | আপডেট: জুলাই ১, ২০২২, ০৩:১৯ এএম

মহারাষ্ট্রের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ‘বিদ্রোহী’ শিবসেনা নেতা একনাথ!
মহারাষ্ট্রের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ‘বিদ্রোহী’ শিবসেনা নেতা একনাথ!

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। মহারাষ্ট্র পেল রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথকে। আজ কিছুক্ষণ আগেই মহারাষ্ট্রের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ‘বিদ্রোহী’ একনাথ শিণ্ডে। সেই সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রাজ্যের দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। 

গতকালই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। উদ্ধবের ইস্তফার পরই বিজেপি শিবির খুশিতে মেতে ওঠে। এরপর আজ বিকেলেই রাজভবনে গিয়ে সরকার গড়ার আবেদন জানান একযোগে একনাথ-দেবেন্দ্র। এরপরই রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথের নাম ঘোষণা করেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। সূত্রের খবর, তিনি নিজে মন্ত্রিসভায় থাকতে চাননি। তবে, পরে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের আরজি মেনে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং উপ- মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আজ সন্ধেয়। 

এদিকে, এদিন টুইটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার অনুরোধে মন্ত্রিসভার সদস্য হতে রাজি হয়েছেন ফড়ণবীশ। মহারাষ্ট্রের মানুষের সেবা করবেন তিনি। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে দেবেন্দ্র জানিয়েছিলেন যে, তিনি মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। এই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর শপথের পর মন্ত্রিসভা ঠিক করা হবে। শিবসেনা এবং বিজেপির নেতারা শপথ নেবেন। আমি সরকার থেকে দূরে থাকব।’

জানা গিয়েছে, এরপরই তাঁকে মন্ত্রিসভায় থাকার জন্য ফোনে অনুরোধ জানান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এরপরই নাকি নিজের মোট পরিবর্তন করেন দেবেন্দ্র। উল্লেখ্য, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের সদ্য প্রাক্ত মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে আক্রমণ করেন দেবেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে বিজেপি সবচেয়ে বড় দল। বিজেপি-শিবসেনাই সরকার গড়ত। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনাদেশকে অপমান করা হয়েছে। এই দায় এড়াতে পারবে না কংগ্রেস। শিবসেনার শাসনে কোনও উন্নয়ন হয়নি।’

প্রসঙ্গত, গতকালই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সেই সঙ্গে গতকালই বিগত কয়েকদিন ধরে চলা মহারাষ্ট্রের মহানাটকের সমাপ্তি ঘটেছে। আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর আসন থেকে সরে দাঁড়ানোয় নয়া সরকার গঠন ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ইস্তফার পর দলের বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিন্ডেকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি আক্রমণ করেন মহারাষ্ট্রের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব। তিনি বলেন, ‘যারা অটোরিকশা, ঠেলাগাড়ি চালাত, আমরা তাঁদের সাংসদ, বিধায়ক বানিয়েছি। আমি যাদের সবকিছু দিয়েছি, তাঁরাই এমন করেছে।’

উল্লেখ্য, রাজনীতিতে আসার আগে অটোরিকশা এবং টেম্পো চালক ছিলেন শিন্ডে। সেই একনাথের মহারাষ্ট্রের রাজনীতির ময়দানে  উত্থান স্বপ্নের মতই। গতকাল উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর জানান যে, ‘আমি এখানে থাকব এবং আমি আবার শিবসেনা ভবনে বসব। আমি আমার সমস্ত মানুষকে একত্র করব।’

উদ্ধব ঠাকরেকে সরানোর পরিকল্পনা অনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। ২০১৯ সালে যখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেলেছিলেন তখনই তিনি বলেছিলেন ‘আমি ফেরত আসবই।’ তাঁর সেই কথাই তিন বছর পার হওয়ার আগেই সত্যি বলেই প্রমাণিত হল। উদ্ধবের ইস্তফার পর দেবেন্দ্র ফড়নবীশের একটি বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপ টুইট করা হয় মহারাষ্ট্রের বিজেপি-র টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রকাশ করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আমি আবারও ফিরে আসব। নতুন এক মহারাষ্ট্র গড়তে! জয় মহারাষ্ট্র।’

একনাথদের বিদ্রোহ শুরুর নেপথ্যেও ছিলেন এই দেবেন্দ্রই। শিবসেনা নেতাদের মুম্বই থেকে সুরাতে এবং সেখান থেকে পড়ে অসমের গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়ার পেছনেও তাঁরই হাত ছিল। বলা হচ্ছে, উদ্ধব ঠাকরের সরকারকে কীভাবে গদিচ্যুত করা যায়, তার পরিকল্পনা তিনি ছকে দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে মাত্র ৮০ ঘণ্টার মধ্যে যখন তাঁর সরকার পড়ে যায়, সেই সময়ই তিনি বলেছিলেন যে, ‘আজ সময় আমার পক্ষে ছিল না। কিন্তু একদিন আবার ফেরত আসবই।’

সূত্রের খবর, ২০২০ সালেই উদ্ধব ঠাকরের সরকারকে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনার একের পর এক ঢেউ এবং উদ্ধব ঠাকরে অসুস্থ হওয়ায় সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে তা বাস্তবায়িত হল। উল্লেখ্য, বিগত ৯ দিনে ৩ বার দিল্লিতে উড়ে গিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। সেখানেই শীর্ষ নেতৃত্বদের সঙ্গে আলোচনা ও পরিকল্পনা করেই মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যতের স্থির করা হয়। এবার সেই দেবেন্দ্রই মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন, উদ্ধব ঠাকরে, কংগ্রেস এবং এনসিপি জোটের সরকার ভেঙে।