বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

তিস্তা চুক্তি অধরা থাকলেও, কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন-সহ একাধিক চুক্তি সাক্ষরিত মোদী-হাসিনা বৈঠকে

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ১০:৪৯ পিএম

তিস্তা চুক্তি অধরা থাকলেও, কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন-সহ একাধিক চুক্তি সাক্ষরিত মোদী-হাসিনা বৈঠকে
তিস্তা চুক্তি অধরা থাকলেও, কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন-সহ একাধিক চুক্তি সাক্ষরিত মোদী-হাসিনা বৈঠকে

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ৪ দিনের ভারত সফরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একাধিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে তা জানা ছিল। পাশাপাশি এই বৈঠকে অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠবে জলবণ্টন এমনটাই মনে করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহলে।

এদিনের বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা। এদিন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে ৫৪ টি নদী বয়ে যায়। দুই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি এক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন নিয়ে আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সাক্ষর করেছি।’

যদিও এদিন তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উল্লেখ্য, ভারত সফরের আগে এক সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জলবণ্টন নিয়ে ভারতকে উদারতা দেখাতে হবে। তাই তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং হাসিনার বৈঠকে আলোচনা হবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তিস্তার জল অধরাই থেকে গেল। মঙ্গলবার দিল্লিতে হওয়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে কোনও আশ্বাস মিলল না।

প্রধানমন্ত্রী তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনও কথা না বললেও, শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি আশাবাদী এই বিষয়গুলি এবং তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনাও খুব শীঘ্রই ফলপ্রসূ হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগেও দু’দেশ পরস্পরের পাশে থেকে একাধিক সমস্যার সমাধান করেছে। আশা করছি, তিস্তার মতো সমস্যা-সহ একাধিক বিষয় জট কাটবে বন্ধুত্বের জোরেই।’ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা শোনা যায় এদিন শেখ হাসিনার মুখে। প্রতিবেশী দেশের জন্য এই দুই দেশের সম্পর্ক নজির বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিন হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠক শেষে মোট ৭ টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ-সহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মোদী বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে IT, মহাকাশ গবেষণা এবং নিউক্লিয়র সেক্টরে আমরা একে অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব।’ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রদেশে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সঙ্গী হল বাংলাদেশ।’

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা যতোই থাকুক না কেন, আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে। এমনটাই এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি এও বলেন যে, মোদীজির নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য মাত্রা পেয়েছে। বৈঠক শেষ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দু-দেশের মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যা, জলবন্টন-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ওই লড়াইয়ের পর ও ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রীর বাতাবরণে বসবাস করছে। আমাদের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মোদীজির নেতৃত্ব।’

এখানেই শেষ নয়, এদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাদের জন্য় এদিন বড় ঘোষণা করলেন শেখ হাসিনা। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা শহিদ বা গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের মুজিব স্কলারশিপ দেওয়া হবে। আগামিকাল সেই ঘোষণ করার কথাও জানালেন শেখ হাসিনা। বুধবার বাংলাদেশ ভারতের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে। তিনি বলেন, ‘দুদেশের সমৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সহমত হয়েছি। ১৯৭৫ সালে যখন আমরা বাবা-মা-ভাইকে হারিয়েছিলাম তখন আমরা দুই বোন এই ভারতেই আশ্রয় পেয়েছিলাম। আমাদের পরিবারের আরও যারা আপনজন হারিয়েছিলাম তারা এখানেই আশ্রয় পেয়েছিলাম। অনেক সমস্যার আলোচনা করে সমাধান করেছি। আমাদের সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।’

প্রসঙ্গত, এবছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। ভারতকে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উপর একটি বই তিনি তুলে দেন নরেন্দ্র মোদীর হাতে।