শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

৩৭০০ কেজি বিস্ফোরকের দাপটে, চোখের নিমেষেই মাটিতে মিশল নয়ডার ৪০ তলা টুইন টাওয়ার

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২২, ১১:০৫ পিএম

৩৭০০ কেজি বিস্ফোরকের দাপটে, চোখের নিমেষেই মাটিতে মিশল নয়ডার ৪০ তলা টুইন টাওয়ার
৩৭০০ কেজি বিস্ফোরকের দাপটে, চোখের নিমেষেই মাটিতে মিশল নয়ডার ৪০ তলা টুইন টাওয়ার

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ঘড়ি কাটায় তখন ঠিক দুপুর আড়াইটে। কথা ছিল, রবিবার অর্থাৎ আজই একটি বোতাম টিপে ধ্বংস করে দেওয়া হবে বেআইনি নির্মাণ টুইন টাওয়ার। যেমন কথা তেমন কাজ, মাত্র ৯ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই ধূলিসাৎ দিল্লির কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু টুইন টাওয়ার। তিন হাজার কেজির বেশি বিস্ফোরকের দাপটে মুহূর্তের মধ্যেই মাটিতে মিশে গেল ‘গগনচুম্বী অট্টালিকা’ ৪০ তলা টুইন টাওয়ার।

একপলক দেখলে মনে হবে, কোনও শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। আজ বিস্ফোরণের জেরে টাওয়ারের ৫০০ মিটার পর্যন্ত এলাকা বিশাল ধোঁয়া এবং ধুলোয় ভোরে যায়। মাত্র ৯ সেকেন্ডে মাটিতে মিশে যায় টুইন টাওয়ার। উল্লেখ্য আইন অমান্য করে ২০১৩ সালে এই টুইন টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল প্রস্তুতকারী সংস্থা। অভিযোগ, এই টাওয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হলেও, সেই বাধা ধোপে টেকেনি। এই টাওয়ার নির্মাণে বাধা দিতে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছিল স্থানীয়দের তরফে। তাতেও কিছু হয়নি। এরপর কার্যত বাধ্য হয়েই স্থানীয় এমারেল্ড কোর্ট সোসাইটির বাসিন্দারা দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্টের।

শুরু হয়, আইনি লড়াই। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর, শীর্ষ আদালতের রায়ে আজই দুপুর আড়াইটে নাগাদ ভেঙে ফেলা হল বেআইনিভাবে নির্মিত নয়ডার এই টুইন টাওয়ার। কেন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় আদালত? জানা গিয়েছে, টাওয়ার দুটি তৈরির সময় নির্মাণের নিয়ম মানা হয়নি। টাওয়ার দুটি তোলার নিয়ম ছিল কমপক্ষে ১৮ মিটার দূরে। কিন্তু দেখা যায় টাওয়ার দুটির মধ্যেকার দূরত্ব মাত্র ৯ মিটার। এই জোড়া বহুতলের একটির নাম অ্যাপেক্স। এর উচ্চতা ১০০ মিটার। অন্যটির নাম সিয়ানে। যার উচ্চতা ৯৭ মিটার। উল্লেখ্য, এই জোড়া টাওয়ার দিল্লির কুতুব মিনারের থেকেও লম্বা।

এই ভবনটি ভেঙে যাওয়ার পরে নয়ডা প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ধুলো দূর করা। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে স্মগ গান। কেউ আহত হতে পারেন এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে হাসপাতালে ৫০টি বেড বুক করে রাখা হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধোঁয়াশা বন্দুক, ১০০টিরও বেশি জলের ট্যাঙ্ক, আর কর্মীদের জন্য ৬টি যান্ত্রিক সুইপিং মেশিন আনা হয়। ১৫০ সাফাই কর্মী আজ একসঙ্গে কাজ করছেন। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণে ৫৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হবে। যা সরাতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে। এদিকে, এই কাজের জন্য এমেরাল্ড কোর্টের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা এবং সেক্টর 93A এর পার্শ্ববর্তী এটিএস ভিলেজ সোসাইটিগুলিকে আগেই ফাঁকা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিকালে তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু যেভাবে চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে, তাতে তাঁদের আজ বিকেলে ফিরতে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এই টুইন টাওয়ার ভাঙার সময় ধুলোয় ঢেকে যাবে গোটা এলাকা এই কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এছাড়াও ২৬ অগস্ট থেকে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, টুইন টাওয়ারের পাশের সবচেয়ে কাছের বিল্ডিংগুলি হল এমারল্ড কোর্ট সোসাইটির Aster 2 এবং Aster 3 যা মাত্র নয় মিটার দূরে। এই ভবনগুলির যাতে কোনও কাঠামোগত ক্ষতি না হয়, এই টুইন টাওয়ার ভাঙার সময়, সেজন্যই এমনভাবে বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙে ফেলা হল।

অন্যদিকে, ধ্বংসাবসের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের আজ ২টো ৩০ থেকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আগেই। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত বা যারা এই ধরনের অসুখে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের জন্য পরামর্শও জারি করা হয়। শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন এমন স্থানীয় বাসিন্দারা যারা ধ্বংসের স্থানের কাছাকাছি বাস করছেন, তাঁদের রবিবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুখোশ পরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, বিস্ফোরণের সময়ে।