শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

স্নাতকোত্তরের পরও মেলেনি চাকরি! ‍‍`এমএ পাশ লটারিওয়ালা‍‍` হয়ে দিন গুজরান যুবকের

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ০২:০০ পিএম | আপডেট: জুন ১৬, ২০২২, ০৮:০০ পিএম

স্নাতকোত্তরের পরও মেলেনি চাকরি! ‍‍`এমএ পাশ লটারিওয়ালা‍‍` হয়ে দিন গুজরান যুবকের
স্নাতকোত্তরের পরও মেলেনি চাকরি! ‍‍`এমএ পাশ লটারিওয়ালা‍‍` হয়ে দিন গুজরান যুবকের

দেশ তথা রাজ্যে বেড়েই চলেছে কর্মহীনের সংখ্যা। দিনের পর দিন এই সমস্যা যেন আরও প্রকট হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার পরও চাকরি পাচ্ছেন না দেশ বা রাজ্যের অজস্র তরুণ-তরুণী৷ ফলে অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যেই দিন গুজরান হচ্ছে তাঁদের। তবে এরইমধ্যে কিছু কিছু জন হতাশা কাটিয়ে জেগে উঠছেন নতুন উদ্যমে। মানসিক জেদ আর ইচ্ছাশক্তির জোরে আগামীর পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাঁরা। সেরকমই একজন হলেন মুর্শিদাবাদের তন্ময় চুনারি।

মুর্শিদাবাদের নওদার সাঁকোয়া এলাকার এলাকার বাসিন্দা তন্ময় গত বছরই স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ এবং গত বছর দূরশিক্ষায় বাংলা নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি। কিন্তু এখনও চাকরি পাননি।

চাকরির জন্য কী না চেষ্টা করেছেন তন্ময়। রাজ্য পুলিশের এসআই, কনস্টেবল, কেন্দ্রে সিআইএসএফ থেকে ব্যাঙ্ক, রেল সহ একাধিক পরীক্ষাতেও বসেছেন। কিন্তু চাকরি পাওয়া এত সহজ হচ্ছিল না। অনেক পরীক্ষায় প্রথম ধাপের লিখিত এবং শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করার পরেও মেলেনি চাকরি। কিন্তু এভাবে হেরে যেতে রাজি ছিলেন না মুর্শিদাবাদের এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যুবক। তাই খুলে বসেন লটারির দোকান। আর এখন নওদার আমতলা বাজার এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি করছেন তিনি। রাস্তার ধারে ছোট একটি টেবিলে থরে থরে সাজানো থাকে লটারির টিকিট। আর টেবিলের তিন দিকে বড়বড় করে লেখা ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’।

তন্ময় জানিয়েছেন, সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পরই বাবাকে হারান তিনি। সংসারে তখন তিনি ছাড়া ছিলেন  মা, দাদা আর বৌদি। সেই সময় দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য কিশোর বয়সেই সাইকেলের দোকানে কাজ শুরু করেন তন্ময়। যে কারণে এক প্রকার স্কুলছুটও হয়ে পড়েছিলেন। এরপর সংসারের হাল ধরতে দাদা জয়দেব চুনারি আমতলা বাজার এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন। তখন ফের স্কুলে ভর্তি হন তন্ময়। মাধ্যমিকও পাশ করেন।

যদিও এরপরও সাংসারিক দুরবস্থা পিছু ছাড়েনি। আর্থিক খরচ জোগানের জন্য মাধ্যমিকের পর থেকে কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও রংমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ আবার কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরি কাজও করেছেন তন্ময়। আর তারই সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। এভাবেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশও করেছেন। তারপরই শুরু করেন চাকরির চেষ্টা। কিন্তু সুফল মেলেনি। এর মধ্যেই আবার মাস কয়েক আগে হঠাতই মৃত্যু হয় দাদা জয়দেবের। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সে পড়ে তন্ময়ের কাঁধে। সেই সঙ্গে রয়েছে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ও ভাইপোর পড়াশোনা। সংসার টানতে তাই এরপর দাদার মতোই লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন তন্ময়। নওদার আমতলা বাজারে  ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’ নামে রাস্তার ধারে টেবিল সাজিয়ে শুরু হয় তাঁর লটারির দোকান।

সারাদিন লটারির টিকিট বিক্রি করে গড়ে আড়াই-তিনশো টাকা কমিশন পান তন্ময়। তা দিয়ে কোনওমতে চলে সংসার। ইদানীং তাঁকে নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনাও শুরু হয়েছে। এরপর তন্ময়ের দোকানে ভিড়ও বাড়ছে। ফলে রোজগার সামান্য হলেও বাড়ছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও চাকরির আশা কিন্তু ছাড়েননি এই যুবক। পুলিশে বা সামরিক বাহিনীতে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে রোজ সকালে দৌঁড়ান। পাশাপাশি দোকানে বসে ফাঁকে ফাঁকে বইয়ের পাতাতেও চোখ বুলিয়ে নেন। তন্ময়ের আশা, একদিন ঠিকই চাকরির পাবেন তিনি। সেই আশা নিয়েই এখন দিন কাটছে তাঁর।