বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

এক পা অকেজো, লাঠি হাতে রোজ ৪০ কিমি সাইকেলে! দুঃস্থ ছাত্রদের ‍‍`ত্রাতা‍‍` মিলন স্যার

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৭:২৬ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২২, ০১:২৬ এএম

এক পা অকেজো, লাঠি হাতে রোজ ৪০ কিমি সাইকেলে! দুঃস্থ ছাত্রদের ‍‍`ত্রাতা‍‍` মিলন স্যার
এক পা অকেজো, লাঠি হাতে রোজ ৪০ কিমি সাইকেলে! দুঃস্থ ছাত্রদের ‍‍`ত্রাতা‍‍` মিলন স্যার

একটি পা অকেজো।  কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতা তাঁকে হার মানাতে পারেনি। সঙ্গী একটি লাঠি আর একটি সাইকেল। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে  রোজ ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দুঃস্থ বাচ্চাদের পড়াতে যান তিনি। অসহায় কচিকাঁচাদের সহায় আজ ‘মিলন স্যার’! 

উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের ব্রহ্মওয়ালি গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিশ্র। লাঠিতে ভর করে ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নিত্যদিন গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াতে যান মিলন। বাড়ি থেকে স্কুল ছ’কিমি দূরে। অকেজো পা নিয়ে অত দূর যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু কখনওই কারও মুখাপেক্ষী হতে চাননি এই যুবক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাঁর কাছে। তাই সেই প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে সাইকেলেই রোজ যাতায়াত তাঁর।

নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মিলনের স্কুলের বেতন দেওয়ার মতোও টাকা ছিল না । কিন্তু নিজেকে উচ্চশিক্ষিত করার লড়াই থামাতে চাননি। একই সঙ্গে তিনি গ্রাম এবং তার আশপাশের এলাকায় অসহায়, গরিব ছাত্রদের বিনামূল্যে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি চাননি অর্থের অভাব যেভাবে তাঁর পড়শোনায় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আর কেউ সেই প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ুক।

এক সাক্ষাৎকারে মিলন বলেছেন, “অর্থের অভাব আমার পড়শোনায় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর কেউ সেই প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ুক তা চাইনি।” মিলনের এক ছাত্রী রোশনী জানিয়েছেন, “আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিলন স্যরের কাছেই পড়তাম। যদি ওঁর ক্লাসে না যেতাম তা হলে হয়তো স্কুল থেকেই আমার নাম কেটে দেওয়া হত।” তিনি আরও বলেন, “মিলন স্যর শুধু শিক্ষা বিতরণ করেন, এমন নয়। তিনি তাঁর পড়ুয়াদের কাছে অনুপ্রেরণা।”

 সরকার তাঁকে অনেক সুবিধা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা নিতে চাননি মিলন। তাঁকে ট্রাইসাইকেল দিতে চাওয়া হয়েছিল, সেই প্রস্তাবও ফিরিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি কারও মুখাপেক্ষী হতে চাই না। সে কারণে বাবার সাইকেল নিয়েই যাতায়াত করি।” গরিব, অসহায় কচিকাঁচাদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার অপর নাম।