শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

রেণুর পর এবার ব্রততী! নার্সের চাকরি নিয়ে আপত্তি, স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ! গ্রেফতার স্বামী

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২, ১০:৫৯ পিএম | আপডেট: জুন ১৩, ২০২২, ০৪:৫৯ এএম

রেণুর পর এবার ব্রততী! নার্সের চাকরি নিয়ে আপত্তি, স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ! গ্রেফতার স্বামী
রেণুর পর এবার ব্রততী! নার্সের চাকরি নিয়ে আপত্তি, স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ! গ্রেফতার স্বামী

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুনের পর এবার ব্রততী। নার্সের চাকরি করা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে স্ত্রী ব্রততীকে মারধর ও প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র মারধর করাই নয়, স্ত্রীয়ের নার্সের চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রও তাঁর স্বামী ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার জোতরামে।  

তবে, অভিযোগ নার্সিং চাকরির প্যানেলে নাম ওঠার পর নয়, মূলত বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে ব্রততীর উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করত স্বামী রাহুল মিশ্র। রবিবার কালনার গ্রামে নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে এমনটাই অভিযোগ করেছেন ব্রততীর বাবা নীলকান্ত চট্টরাজ। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বাড়ির অমতেই একবছর আগে রাহুল মিশ্রকে বিয়ে করেন ব্রততী। এদিকে, বিয়ের পর থেকেই তাঁর মেয়ের উপর অত্যাচার করত জামাই রাহুল মিশ্র। মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও করত। গত শুক্রবার রাতে তাঁর সামনেই রাহুল মিশ্র ব্রততীকে চড়-থাপ্পড় মারে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। 

স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্রততী একপ্রকার বাধ্য হয়েই বাবার বাড়িতে রয়েছেন বর্তমানে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ২ মাসের ছোট ছেলেকে কাছে পেয়েছেন তিনি। এখন বিবাহবিচ্ছেদ চান ব্রততী। সেই সঙ্গে মেয়ে চাকরি করতে চান বলেই জানিয়েছেন ব্রততীর বাবা। 

জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতেই ব্রততীর ২ মাসের দুধের শিশুকে পুলিশ তাঁর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। ছেলেকে নিয়ে এই মুহূর্তে তিনি কালনায় বাপের বাড়িতে রয়েছেন। গোটা ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্রততী সংবাদমাধ্যমের কাছে আসতে চাননি। 

গত শুক্রবারই মারধরের ঘটনা ঘটে। এদিকে, ব্রততী চট্টরাজ মিশ্রর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর স্বামী রাহুল মিশ্রকে শনিবার গ্রেফতার করে শক্তিগড় থানার পুলিশ। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দাঁয়ের করে পুলিশ শনিবারই ধৃত রাহুল মিশ্রকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে। বিচারক ধৃতকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে, আগামী মঙ্গলবার ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, ধৃত ব্রততীর স্বামী রাহুলের মা রবিবার দাবি করেছেন, বউমার নার্সিংয়ের চাকরি করা নিয়ে তাঁর ছেলে কোনওদিন কোনও আপত্তিই জানায়নি। বউমা মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।

অন্যদিকে, ব্রততীর বাবা নীলকান্তবাবু জানিয়েছেন যে, তাঁর মেয়ে নার্সিং-এর পরীক্ষা দিয়েছিল। চাকরির প্যানেলে নাম উঠেছে। কিন্তু চাকরি করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয় জামাই রাহুল মিশ্র। এরপর চলতি মাসের ১০ তারিখ ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা। তিনি জানিয়েছেন এ প্রসঙ্গে, ‘জামাই বলে, মেয়েকে বন্ডে লিখে দিতে হবে, আমি স্বামীর ঘর করব, স্বামীর সঙ্গেই থাকব। চাকরি করব না।’ কিন্তু মেয়ে সেই কোথায় রাজি হয়নি। এরপরই মেয়েকে মারধর করে তাঁর স্বামী রাহুল মিশ্র। পাশাপাশি চাকরির কাগজপত্রও ছিঁড়ে ফেলে সে। তিনিই কোনওরকমে মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে সোজা থানায় নিয়ে যান। সেখানেই রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁয়ের করেন তাঁরা।  

এরপরই অভিযোগের ভিত্তিতে রাহুল মিশ্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামাইয়ের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নীলকান্তবাবু। এদিকে, ব্রততীও রেণুর মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বামীর ঘর করবেন না। চাকরিই করবেন এবং নিজেই সন্তানকে বড় করে তুলবেন।  

ব্রততী বা তাঁর পরিবার যাই অভিযোগ করুক না কেন অন্য কথা বলছেন রাহুলের দিদি এবং মা। রাহুলের দিদি পাল্টা দাবি করেছেন, ব্রততী চাকরি পাবে একথা রাহুল আগে থেকেই জানত। ভাই রাহুল এবং তাঁর মা অনেকবার ব্রততীকে সঙ্গে করে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে ইন্টারভিউয়ের জন্য। চাকরির জন্য সবসময় সমর্থনও করেছে। তাহলে সেদিন কী এমন ঘটল? রাহুলের দিদি শ্রাবণী মিশ্র পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, ‘পারিবারিক ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে অশান্তি সব বাড়িতে হয়। এখানেও হয়েছিল। ব্রততী সবসময় বলত, চাকরি পেলে চলে যাব। ভাইকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাইত। কিন্তু ভাই সেটা চাইত না। ভাই মায়ের সঙ্গে থাকতে চাইত।’ ধৃতের প্রতিবেশীরাও দাবি করেছেন যে, ব্রততী তাঁর স্বামী রাহুলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছ, সেগুলি সত্য নয় বলেই তাঁরা মনে করেন।