শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

‘টেন্ডার পেতেই টাকা ও গাড়ি অনুব্রতকে’! বিস্ফোরক দাবি সিউড়ির ব্যবসায়ীর

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২২, ০৭:৫৮ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২২, ০২:০৬ এএম

‘টেন্ডার পেতেই টাকা ও গাড়ি অনুব্রতকে’! বিস্ফোরক দাবি সিউড়ির ব্যবসায়ীর
‘টেন্ডার পেতেই টাকা ও গাড়ি অনুব্রতকে’! বিস্ফোরক দাবি সিউড়ির ব্যবসায়ীর

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ তদন্ত যতো এগোচ্ছে ততোই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। আর ততোই বিপাকে পড়ছেন বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’ অনুব্রত মণ্ডল। এবার অনুব্রত মণ্ডলের নামে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সিউড়ির গাড়ি ব্যবসায়ী। এদিনই বোলপুরে অনুব্রতর রাইস মিলে হানা দিয়ে মোট ৬টি বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান পান সিবিআই আধিকারিকরা। এরপরই কার্যত অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখে খুলে বোমা ফাটিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি দাবি করেছেন, ঠিকাদারির বরাত পেতেই অনুব্রত মণ্ডলকে কোটি কোটি এবং বিলাসবহুল গাড়ি দিয়েছিলেন। তাও শেষপর্যন্ত কাজের বরাত পাননি ওই ব্যবসায়ী। এখানেই শেষ নয়, এমনকি কাজের টেন্ডার না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা অরূপ রতন ভট্টাচার্য এবং রামপুরহাটের প্রবীর মণ্ডল যৌথ উদ্যোগে লোকনাথ অটোমোবাইলস নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন্তিএই দুজনে তিলপাড়া জলাধার থেকে বালি তোলার বরাত পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এঁদের মধ্যেই ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডলের দাবি, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বরাত দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে মোট ১০ কোটি টাকা চান। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। শেষমেষ ৫ কোটি ৫৬ লক্ষ নগদ টাকা দিয়েছিলেন ওই দুই ব্যবসায়ী। বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে বসেই নগদ দেড় কোটি টাকা অনুব্রত নিজে হাতে নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন ওই ব্যবসায়ী। বাকি টাকা বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের হাতে দিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১৮ সালের মার্চ মাস নাগাদ অরূপ রতন ভট্টাচার্য নগদ টাকা দিয়েছিলেন তাঁদের।

আজ ৪ সদস্যের সিবিআই-এর এক প্রতিনিধি দল যায় অনুব্রতর রাইস মিলে। তাঁরা ভোলে ব্যোম রাইস্মিলে তল্লাশিতে যান। সিবিআই সূত্রের দাবি, রাইস মিলে অনুব্রতর মেয়ে, স্ত্রী-র অংশীদারিত্ব রয়েছে। পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে জে, এই রাইস মিলে প্রায়শই আসতেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। হিসেবের খাতাপত্র দেখতেন। আজ এই রাইস মিলে মোট ৫ টি গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে আবার একটি গাড়িতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্টিকার লাগানো। এখন প্রশ্ন এইসব গাড়ির মালিক কে? এর গাড়িগুলির মালিকানা কি অনুব্রত মণ্ডলের নামে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সিবিআই-এর আধিকারিকরা। আর এই খোঁজ করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে টাকা ও গাড়ি নেওয়ার ঘটনা। 

আজ ভোলে ব্যোম রাইস মিলে যে Ford Endeavour গাড়িটি পাওয়া গিয়েছে, তার নম্বর, WB54U6666। ওই গাড়িটি ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডলের। ২০১৮ সালেই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অনুব্রত মণ্ডলকে ওই ৪৬ লক্ষ টাকা মূল্যের গাড়িটি দিয়েছিলেন প্রবীর মণ্ডল, এমনটাই দাবি। কিন্তু কোটি কোটি টাকা, দামি গাড়ি দেওয়ার পরেও তাঁরা কাজের বরাত পাননি বলেই অভিযোগ জানিয়েছেন। আবার কাজের বরাত না পেয়ে, গত বছর মে-জুন মাস নাগাদ ওই গাড়িটি ফেরত চান প্রবীর মণ্ডল। কিন্তু গাড়ি ফেরত দেওয়া তো দূর, ব্যবসায়ীর দাবি, গাড়ি ফেরত চাইতেই তাঁকে গাঁজা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন কেষ্ট।

এদিন এই অভিযোগ প্রসঙ্গে এই দুইজনের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঠিকাদারির বরাত পেতেই অনুব্রতকে গাড়ি দিই। অনুব্রত মণ্ডল নিজে নিয়েছিলেন দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা সায়গলকে দিই। গাড়ি দিয়েও কাজের বরাত পাইনি। ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ট্র্যাপে পড়ে গিয়েছিলাম। টাকা চাইলে গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি মেলে।’

অন্যদিকে, প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের শেষ করে দিয়েছে। আমি আগে ভয়ে অভিযোগ করতে পারিনি। ৪৬ লক্ষ টাকার গাড়ি দিয়েছিলাম। তিলপাড়ার সংস্কারের কাজের বিনিময়ে দিয়েছি। ৫ কোটি দিয়েছি, গাড়ি দিয়েছি। টাকা ফেরত চাইলে বলে জেলে থাকবি না গাড়ি চাপবি।’