শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

অগ্নিপথ আসলে দুর্নীতি, ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ললিপপ দেখাচ্ছে BJP’! কটাক্ষ মমতার

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২, ০৫:২৮ পিএম | আপডেট: জুন ২৮, ২০২২, ১১:২৮ পিএম

অগ্নিপথ আসলে দুর্নীতি, ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ললিপপ দেখাচ্ছে BJP’! কটাক্ষ মমতার
অগ্নিপথ আসলে দুর্নীতি, ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ললিপপ দেখাচ্ছে BJP’! কটাক্ষ মমতার

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে ফের মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ফের কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মমতা। সোমবার বর্ধমানের নবাবহাটের গোদার মাঠের প্রশাসনিক সভা থেকে অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর ফের একবার কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডের কর্মিসভা থেকে এই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের তুলোধোনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 

এদিন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের মোদী সরকারের এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘অগ্নিপথ প্রকল্প আসলে দুর্নীতি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ললিপপ দেখাচ্ছে বিজেপি।’ এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে, ‘ভোট মিটলেই অগ্নিবীরদের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার’। তাই তিনি আরজি জানিয়েছেন যে, কেউ যেন বিজেপি ফাঁদে পা না দেন। 

মঙ্গলবার আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডের কর্মিসভায় হাজির হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়। এদিনের সভায় কর্মসংস্থান থেকে অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন যে, ‘৪ বছর চাকরি দেয়নি ওরা। আর এবার সাধারণ ছেলেমেয়েরা এই প্রশিক্ষণ (অগ্নিপথ প্রকল্প) পাবেন না। প্রশিক্ষণ পাবেন বিজেপির কিছু শাখার লোকজন। সেনাকে সামনে রেখে চালাকি করছে কেন্দ্রীয় সরকার।’ এখানেই শেষ নয়, তাঁর আরও দাবি, ‘অগ্নিপথ প্রকল্পে রাজ্য পিছু কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি পাবেন। তাও মেরেকেটে মাত্র ৪ বছরের জন্য।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেছেন, ৪ বছর পর এদের চাকরির দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। এমনটাই নাকি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 

আসানসোলের কর্মিসভা থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কর্নেলবাবু চিঠি দিয়েছেন। বলছেন, ৪ বছর পর অগ্নিবীরদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে। কেন্দ্রে ওদের ডেটা ব্যাংক আমাদের দিয়ে দেবে। তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকেই।’ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘চাকরি দিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু বিজেপির পাপ আমি নেব কেন? বিজেপির লোকদের আমি কেন চাকরি দেব? ওদের ময়লা ওদেরই সাফ করতে হবে।’ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘আমার রাজ্যে যুবক-যুবতীর অভাব নেই। চাকরি চাইলে, সবার আগে তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়।’

অন্যদিকে, গতকালের পর এদিন ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিবীরদের ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির দাবিতে সরব হব। তিনি বলেন, ‘৪ বছরের চাকরিতে জীবন চলে না। চাকরি করতে দিতে হবে ৬০ বছর পর্যন্ত। সেটা না পারলে মিথ্যা কথা বলবেন না। আসলে এটা একটা দুর্নীতি। বিরাট বড় দুর্নীতি।’

উল্লেখ্য, সোমবার বর্ধমানের মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকে অগ্নিবীরদের চাকরির মেয়াদ ৪ বছর নয়, পরিবর্তে ৬০ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, উজ্জ্বলা প্রকল্পের মতোই লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে ৪ বছরের জন্য চাকরি দিচ্ছে বিজেপি সরকার।

বর্ধমানের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি এখন কর্মসংস্থানে জোর দিয়েছি। ওটাই আমার পাখির চোখ।’ এরপরই বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘আর অদের দেখুন, চার বছরের চাকরি দিচ্ছে। তারপর কী? ললিপপ চুষবে? চার বছরের চাকরি দিয়ে সারাজীবন চলবে তো?’ ২০২৪-এই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ভোট টানতেই, বিজেপি সরকার এই লোক দেখানো চাকরি দিচ্ছে বলেও খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এও বলেছিলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪ বছরের চাকরি। বাকি জীবন কীভাবে চলবে? আমরা দাবি জানাচ্ছি, যাতে এই প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর নয়। ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত তাঁদের চাকরি করতে দিতে হবে।’

কী এই অগ্নিপথ প্রকল্প? ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্বল্প মেয়াদে চুক্তির ভিত্তিতে সেনা নিয়োগ করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে  তরুণদের নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’। বয়সসীমা ১৭ থেকে ২১ বছর। পরে অবশ্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২৩ করা হয়। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’। ‘অগ্নিবীর’দের মাত্র ৪ বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীকালে ইচ্ছুকদের স্থায়ীকরণ করা হবে। তবে, তা মাত্র ২৫ শতাংশ। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই অস্থায়ী চাকরির মাধ্যমে ‘নিয়মিত ক্যাডার সেবায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদনের সুযোগ’ থাকছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া পড়ুয়ারা। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন এবং ৪ বছরের মেয়াদ শেষে এককালীন ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।