শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সংসারের সচ্ছলতা আনতে গুজরাটে গিয়েছিলেন বর্ধমানের যুবক, সেতু বিপর্যয়ের পর গ্রামে এল দুঃসংবাদ

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ১২:২০ পিএম | আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৬:৩১ পিএম

সংসারের সচ্ছলতা আনতে গুজরাটে গিয়েছিলেন বর্ধমানের যুবক, সেতু বিপর্যয়ের পর গ্রামে এল দুঃসংবাদ
সংসারের সচ্ছলতা আনতে গুজরাটে গিয়েছিলেন বর্ধমানের যুবক, সেতু বিপর্যয়ের পর গ্রামে এল দুঃসংবাদ

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে গেছে মোদীগড় গুজরাটে। রবিবার সন্ধের সময় এই রাজ্যের মোরবি জেলার মচ্ছু নদীতে ভেঙে পড়ে বহু পুরাতন কেবল ব্রিজ। এই দুর্ঘটনায় ক্রমশ বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, অনেকের খোঁজ নেই। চারদিকে শুধুই স্বজন হারানোর বেদনা। মৃতদের তালিকায় রয়েছে বাংলার বাসিন্দা এক যুবক।

এক বছরও হয়নি গুজরাটে গিয়েছিলেন, তার মধ্যেই নেমে এল বড় বিপর্যয়। সংসারের সচ্ছলতা আনতেই রাজ্যের বাইরে গুজরাটে চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন বর্ধমানের যুবক। রবিবারের অভিশপ্ত সন্ধ্যায় ওই ব্রিজে তিনিও ছিলেন। টিভিতে দুর্ঘটনার খবর দেখার পর থেকেই ভয়ে কাঁটা হয়েছিল পরিবার। খালি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলেন পরিবারের সদস্যরা, যাতে কোনও খারাপ খবর না আসে। কিন্তু সেই প্রার্থনা কাজে দিল না। ভোরের আলোর সঙ্গেই বর্ধমানের পূর্বস্থলীর গ্রামে এল পরিবারের রোজগেরে ছেলের মৃত্যু সংবাদ। মৃত্যু হয়েছে পূর্বস্থলী ২ নং ব্লকের মুসকিমপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশববাটির বাসিন্দা হাবিবুল শেখের।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় মাস দশেক আগে কাজ পেয়ে গুজরাটে যায় হাবিবুল। সেখানে সোনা-রুপোর কারিগরের কাজ পেয়েছিলেন তিনি। আগে থেকেই সেখানে কাজ করতেন হাবিবুলের কাকা। তাঁর কাছেই থাকতেন বর্ধমানের মৃত তরুণ। জানা গিয়েছে, অনেকদিন পরে, ছটপুজো উপলক্ষে ছুটি পেয়ে সদ্য খোলা মোরবির ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরতে গিয়েছিলেন মৃত এ রাজ্যের যুবক। দুর্ঘটনার সময়ে ব্রিজের উপরেই ছিল হাবিবুল। দুর্ঘটনার পর থেকেই আর তাঁর কোনও খোঁজ মিলছিল না। এরপর রবিবার গভীর রাতে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

এদিকে, আজ সকালেই দুঃসংবাদ এসে পৌঁছায় হাবিবুলের গ্রামে। সূত্রের খবর, মোরবি থেকে আহমেদাবাদে আনা হচ্ছে গুজরাটে ব্রিজ বিপর্যয় মৃত হাবিবুল শেখের দেহ। সেখান থেকে বিমানে করে দেহ ফেরানো হবে রাজ্যে। গুজরাটের তথ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘এখনও পর্যন্ত ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ জন। এখনও সেনা, নৌসেনা, বিমানবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।’

জানা গিয়েছে যে, গতকাল সন্ধে সাড়ে ৬ টা নাগাদ মচ্ছু নদীর উপর এই ঝুলন্ত ব্রিজ ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে সন্ধে সাড়ে ৭ টা নাগাদ শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ছটপুজো উপলক্ষ্যে মচ্ছু নদীর তীরে যাওয়ার সরু রাস্তায় তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি থাকায় উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লেগে যায়। স্থানীয়রাই প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এর সঙ্গে সেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনাও হাত লাগিয়েছে উদ্ধারকাজে। এই দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের খুঁজতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে মোট ৫ টি দল মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে গুজরাট সরকার। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট সরকার। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, ‘প্রায় ২০০ জন ব্যক্তি উদ্ধারকাজে শামিল হয়েছেন। এখনও নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি চলছে। গোটা ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে খবর, সেতুটি সারানোর কাজ চলছিল। দিন পাঁচেক আগে নতুন করে খুলে দেওয়া হয়েছিল ওই সেতু। আর তারপরই রবিবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, মোরবির এই কেবল ব্রিজ বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। গুজরাটে এই সেতু বা ব্রিজ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সম্প্রতি মেরামতের জন্য বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ওধভজি পটেলের মালিকানাধীন ওরেভা গ্রুপকে মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি মেরামত করা হয়েছে। পরে ২৬ অক্টোবর পুনরায় সেতুটি চালু করা হয়। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন হঠাৎ ছিঁড়ে পড়ল শতাব্দী প্রাচীন ঝুলন্ত সেতু? নেপথ্যে রয়েছে কোনও ষড়যন্ত্র? নাকি নিছক গাফিলতির জেরেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা? এদিকে, সেতু বিপর্যয় নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ।