রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

কুসংস্কারের জের! অসুস্থ মাকে ডাইনি অপবাদ, প্রতিবাদ করায় করুণ পরিণতি ছেলের

চৈত্রী আদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২২, ০৭:৪৮ এএম | আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২২, ০১:৪৮ পিএম

কুসংস্কারের জের! অসুস্থ মাকে ডাইনি অপবাদ, প্রতিবাদ করায় করুণ পরিণতি ছেলের
কুসংস্কারের জের! অসুস্থ মাকে ডাইনি অপবাদ, প্রতিবাদ করায় করুণ পরিণতি ছেলের

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সমাজ তথাকথিত উন্নত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আজও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারেননি অনেকেই। এমন অনেক জায়গাও রয়েছে যা এখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এমনই একটি জায়গা হল মালদার গাজোল থানার অন্তর্গত ইন্দ্রসাইল গ্রাম। এই গ্রামে কেবল অসুস্থতার কারণে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদ করায় সালিশি সভায় মহিলার ছেলেকে বেধড়ক মারধরও করা হয়।

সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে থেকেই গাজলের ইন্দ্রসাইল গ্রামের বাসিন্দারা একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। রোগীদের চিকিৎসা করাতে ডাক্তার ডেকে আনা তো দূরের কথা, তার পরিবর্তে চলতি মাসের ১৯ তারিখ ইটাহার থেকে নিয়ে আসা হয় এক ওঝাকে। বসে সালিশি সভাও। অভিযোগ ওঠে, ওই ওঝাই রাধন হেমব্রম নামের এক মহিলাকে ডাইনি বলে চিহ্নিত করে। জানায়, ওই মহিলার জন্যই একের পর এক গ্রামবাসী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এরপরই গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করে ওই মহিলার ছেলে সুবোধ হাঁসদা। অভিযোগ, ওই সালিশি সভায় সর্বসমক্ষে প্রতিবাদ করায় সুবোধকে বেধড়ক মারধর করে বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী। এমনকি মেরে তাঁর মাথাও ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আক্রান্ত অবস্থায় গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুবোধকে। তবে ক্রমশই অবস্থার অবনতি ঘটায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

এরপর গত ২১ জুলাই থানার দ্বারস্থ হন সুবোধ হাঁসদার বাবা। তবে সেখানেও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। এই প্রসঙ্গে সুবোধ জানান, তাঁকে বেধড়ক মারধরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে বদলে দেওয়া হয় অভিযোগপত্রের বয়ান। অভিযোগপত্রে ডাইনি কথাটির উল্লেখ করতে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকের তরফ থেকে বলা হয়, ডাইনি কথাটি বাদ দিয়ে মারধরের একটি সাধারণ অভিযোগপত্র লিখতে। তিনি এও জানান, পুরো বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন ওই অঞ্চলের উপপ্রধান। কিন্তু পুলিশের প্রস্তাব একেবারেই মেনে নেননি সুবোধ।

ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে সুবোধের পরিবার। অন্যদিকে থানায় অভিযোগপত্রের আসল বয়ান কেন বদলে দেওয়া হল এই প্রশ্ন তুলে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন তাঁরা। ৬ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই প্রসঙ্গে মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।