বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সরকারি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সদ্যই নার্সের চাকরি পেয়েছিলেন কেতুগ্রামের রেনু খাতুন। কিন্তু আচমকাই তাঁর জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। স্ত্রীকে সরকারি চাকরি করতে দিতে রাজি ছিলেন না স্বামী শের মহম্মদ শেখ ওরফে শরিফুল। তাই কেটে নিয়েছিলেন রানুর ডান হাতের কব্জি। যদিও অদম্য মনের জোর নিয়ে এক হাত দিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করেন রেনু। মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তায় সম্প্রতি সরকারি চাকরিও পেয়েছেন তিনি।
এরই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন রেনু। তিন দিনের জন্য বর্ধমান সফরে গিয়েছেন মমতা। সোমবার বর্ধমানের নবাবহাটা লাগোয়া গোদায় হেলথ সিটির মাঠে একটি সভায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। আসন্ন খরিফ মরশুমে নতুন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রাজ্যের ৮৯ লাখ কৃষককে মোট ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। পূর্ব বর্ধমানে সেই প্রকল্পেরই সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার সেখানে উপস্থিত হন রেনু খাতুন। দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বেশ কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় রেনুকে। শরীরের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি এদিন রেনুকে জড়িয়ে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “লড়াই চালিয়ে যাও। জীবনে এগিয়ে যাও। আমরা তোমার পাশে আছি।” মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন রেনু খাতুন। যোগ দিয়েছেন নতুন চাকরিতেও। সেই থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রবল ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন রেনু। অবশেষে তাঁর ইচ্ছাপূরণ হল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন রেনু। বলেন, “আজকের দিনটা আমার কাছে স্পেশাল হয়ে থাকল।”
প্রসঙ্গত, নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ শেষ করে রেনু প্রথমে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে সম্প্রতি পরীক্ষায় পাশ করে প্যানেলভুক্ত হওয়ার পর একটি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পান তিনি। কেবল চাকরিতে যোগ দেওয়াই বাকি ছিল। স্ত্রী সরকারি চাকরি পেয়ে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন, এই আশঙ্কা ক্রমশই গ্রাস করতে থাকে শরিফুলকে। এরপরই গত ৪ জুন পরিকল্পনা মাফিক স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি কেটে নেন তিনি। পরের দিন রানুর বাবা আজিজুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত স্বামী সহ অন্যান্য সঙ্গীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
এত কিছুর পরেও দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বেডে শুয়েই নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করেন রেনু। জীবনযুদ্ধে হার না মানার মানসিকতাকে সঙ্গী করেই শুরু করেন নতুন পথচলা। বাঁ হাত দিয়েই শুরু করেন লেখালিখি। সরকারি নার্সিংয়ের চাকরি তিনি করবেনই। তাই ডান হাতের কব্জি বাদ গেলেও, যাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় পিছু হটতে না হয়, তাঁর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দেন রেনু।
কিছুদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী সহায়তায় নতুন চাকরি পান তিনি। গত ২১ জুন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে স্টাফ নার্স গ্রেড ২ পদে যোগ দেন। অনেক ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে রানু আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। ডান হাত কাটা গিয়েছে তো কি, বাঁ হাত দিয়েই শুরু করেছেন সব কাজ। লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে যাওয়ার পাত্রী তিনি মোটেই নন। তাই দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন রেনু খাতুন।
আপনার মতামত লিখুন :