শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

চুরি করতে গিয়ে গৃহকর্তাকে প্রণাম! বাজার করার টাকা রেখে চম্পট দিল ‘সহৃদয়’ দুই চোর

চৈত্রী আদক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২২, ১০:০৪ পিএম | আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২২, ০৪:০৪ এএম

চুরি করতে গিয়ে গৃহকর্তাকে প্রণাম! বাজার করার টাকা রেখে চম্পট দিল ‘সহৃদয়’ দুই চোর
চুরি করতে গিয়ে গৃহকর্তাকে প্রণাম! বাজার করার টাকা রেখে চম্পট দিল ‘সহৃদয়’ দুই চোর

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চুরির উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছিল দুই চোর। ঢুকেই তারা দেখে, সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মাস্টারমশাই। যতই চৌর্যবৃত্তি করুক না কেন, সামনে স্বয়ং মাস্টারমশাই দাঁড়িয়ে আছেন বলে কথা! একটা প্রণাম না করলে হয় নাকি? অগত্যা গোটা ঘর লুটপাট করে গৃহকর্তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে চম্পট দেয় ওই দুই চোর। তবে চোর বলে কি মানবিকতা নেই? তাই বাজার করার জন্য রেখে যায় ২০০ টাকা। চোরের এমন কাণ্ড দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে যান খোদ গৃহকর্তাও।

মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্যারেজ আবাসনে থাকেন ফারাক্কা ব্যারেজ হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরিশচন্দ্র রায়। সোমবার রাতে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাইও। রাতের খাওয়া শেষ করে ওষুধ খাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি ভাইয়ের সঙ্গে চলছিল গল্পও। আচমকাই মুখ ঢাকা অবস্থায় হাঁসুয়া এবং ভোজালি হাতে দুই চোর দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে ঘরে। গৃহকর্তার গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে যাবতীয় টাকা-পয়সা তুলে দিতে বলে তাদের হাতে।

আচমকাই দুষ্কৃতীদের হানায় হকচকিয়ে যান হরিশচন্দ্র বাবু। তবুও পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন হরিশচন্দ্র বাবুর ভাই। সেই সময় তাঁকে জোর করে শৌচালয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় দুই চোর। শৌচালয়ের দরজা আটকে দেয় বাইরে থেকে। উপায় না পেয়ে আলমারি খুলে ১৫ হাজার টাকা দুষ্কৃতিদের হাতে তুলে দেন হরিশচন্দ্র বাবু।

হরিশচন্দ্র বাবুর কথায়, চোরেরা তাঁদের গলার কাছে ধারালো অস্ত্র ধরায় প্রাণরক্ষার তাগিদে বাধ্য হয়ে সমস্ত টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। ‌তবুও আরও কিছু পাওয়ার আশায় সারা ঘর লন্ডভন্ড করে খুঁজতে থাকে চোরেরা। একসময় দুটি মোবাইল ফোনও পকেটে ভরে নেয় তারা। বারবার বলতে থাকে তারা নাকি হরিশচন্দ্র বাবুকে চেনে। গোটা বাড়ি লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার সময় হরিশচন্দ্র বাবু তাদের রীতিমতো অনুনয় করে বলেন, “সব টাকা নিয়ে চলে যাবে? কালকের বাজারটা হতে হবে না!”

মাস্টারমশাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারেনি ‘মানবিক’ দুই চোর। লুট করা ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০০ টাকা হরিশচন্দ্র বাবুর হাতে ধরিয়ে দেয় তারা। এমনকি ফেরত দেয় একটি মোবাইল ফোনও। এরপর যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তড়িঘড়ি ফারাক্কা থানায় খবর দেন বাড়ির মালিক। সেদিন রাতেই হরিশচন্দ্র বাবুর বাড়িতে পৌঁছায় পুলিশ।

গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় ফারাক্কা ব্যারেজ আবাসনে। হরিশচন্দ্রবাবু জানান, ফারাক্কা ব্যারেজে প্রচুর সংখ্যক সিআইএফ নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও ওই অঞ্চলে এমন ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। পুরো বিষয়টিতে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হরিশচন্দ্র বাবু। দুষ্কৃতদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।