সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

হিংস্রতার চরম নিদর্শন! তরুণীকে কেটে ৩৫ টুকরো করল লিভ-ইন পার্টনার

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২২, ০২:২৪ এএম

হিংস্রতার চরম নিদর্শন! তরুণীকে কেটে ৩৫ টুকরো করল লিভ-ইন পার্টনার
হিংস্রতার চরম নিদর্শন! তরুণীকে কেটে ৩৫ টুকরো করল লিভ-ইন পার্টনার / প্রতীকী ছবি

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এককথায় হিংস্রতার চরমতম নিদর্শন। এমন এক হত্যাকাণ্ড যা যেকোনো সাইকো থ্রিলারকেও হার মানাবে। বিয়ের জন্য প্রেমিককে ক্রমাগত চাপ দেওয়ায় খুন হতে হল এক তরুণীকে। শুধু খুন করেই থেমে থাকেনি লিভ-ইন পার্টনার। প্রেমিকার দেহ ৩৫ টুকরো করে, ১৮ দিন ধরে তা গোটা দিল্লি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেলেছে। এমনটাই জানা গিয়েছে পুলিশি তদন্তে।

নৃশংস এই হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। অভিযুক্ত প্রেমিককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতা তরুণীর নাম শ্রদ্ধা, বয়স ২৬ বছর। মুম্বইয়ের একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন তিনি। প্রেমে অন্ধ হয়ে পরিবার, চাকরি, নিজের শহর সব ছেড়ে চলে আসেন একসময় দিল্লিতে। প্রেমিকের সঙ্গে আলাপও ওই কল সেন্টারেই। সেখান থেকেই পরিচয় এবং প্রেমে পড়া। অভিযুক্ত প্রেমিকের নাম আফতাব আমিন পুণাওয়ালা।

কর্মক্ষেত্রে আফতাবের প্রেমে পড়েন শ্রদ্ধা। তবে, বিধর্মী যুবকের সঙ্গে বাড়িরই মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক পছন্দ ছিল না একেবারেই শ্রদ্ধার বাড়ির সদস্যদের। এই কারণেই লিভ-ইন করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রদ্ধা-আফতাব। মুম্বই ছেড়ে তাঁরা দিল্লির মেহেরৌলিতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন।

শুরুতে কিছুদিন সব কিছু স্বপ্নের মতো সুন্দর লাগলেও, ঘোর কাটতে বেশি সময় লাগেনি। দ্রুত তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। অশান্তি নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়। অভিযুক্ত প্রেমিকের অভিযোগ, কিছু দিন একসঙ্গে থাকার পর থেকেই বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে শ্রদ্ধা। কিন্তু আফতাব ‘লিভ-ইন’-এর পক্ষেই ছিল। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে অশান্তি চলত। এই কারণেই একসময় শ্রদ্ধা নিজের বাড়ি ফিরে যেতে চান।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৮ মে একই কারণে দুজনের মধ্যে একই কারণে অশান্তি হয়। যা হাতাহাতিতে পর্যন্ত যায়। এরপরই রাগের বশে শ্রদ্ধাকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে আফতাব। এরপর প্রেমিকার দেহ কেটে ৩৫ টুকরো করে ফেলে সে। কাটা অংশে যাতে পচন না ধরে তার জন্য নতুন ফ্রিজও কেনে। সেখানে শ্রদ্ধার দেহাংশগুলিকে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর ১৮ দিন ধরে ঠিক রাত ২টো নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে শ্রদ্ধার দেহাংশ ফেলতে যেত আফতাব। এইভাবেই ১৮ দিন ধরে প্রেমিকার দেহ গোটা দিল্লি শহরজুড়ে ফেলে বেড়ায় আফতাব।

প্রমাণ লোপাটের জন্যই এই কাজ কি? অনেকে তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে, সেপ্টেম্বরে শ্রদ্ধার এক বন্ধু তাঁর ভাইকে জানায় যে, তাঁর মোবাইল ফোন দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। তাঁর পরিবার এটা জানার পর শ্রদ্ধার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চেক করে এবং দেখেন এই সময়ের মধ্যে কোন আপডেট নেই। পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হওয়ায়, নভেম্বরে নির্যাতিতার বাবা বিকাশ মদন ওয়াকার মুম্বই পুলিশের কাছে গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে যে, নির্যাতিতার শেষ অবস্থান দিল্লিতে ছিল। তার ভিত্তিতেই মামলাটি দিল্লি পুলিশের কাছে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। নির্যাতিতার বাবা পুলিশের কাছে আফতাবের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথাও জানিয়েছিলেন। মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে তার হাত রয়েছে বলেও অভিযোগে জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, ৮ নভেম্বর বিকাশ মদন ওয়াকার তার মেয়েকে দেখতে দিল্লিতে আসেন এবং তার ফ্ল্যাটে তালা দেখতে পান। শ্রদ্ধার বাবা তাঁর অভিযোগে এও জানিয়েছিলেন যে, মেয়ে তাঁকে জানিয়েছে আফতাব তাঁকে প্রায়শই মারধর করত। শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে, শনিবারই পুলিশ আফতাবকে গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশি জেরায় সে নিজের দোষের কথা স্বীকার করে নেয়। পুলিশ তার বিরুদ্ধে হত্যার মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আফতাব আমিন পুণাওয়ালা প্রশিক্ষিত শেফ, সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়েই শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে। সম্ভবত মাংস কাটার ছুরি ব্যবহার করেছে সে, এমনটাই মনে করছে পুলিশ। আফতাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দিল্লির মেহেরৌলির জঙ্গল থেকে কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে, সেগুলি শ্রদ্ধার দেহাবশেষ কিনা তা জানা যায়নি।