রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সিনেমা থেকে সরে আসাটা মানতে পারেনি, মনকষ্টে ভুগত! অভিষেকের মৃত্যুতে বিস্ফোরক বিপ্লব

শ্রেয়সী দত্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২২, ০১:৫৯ পিএম | আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম

সিনেমা থেকে সরে আসাটা মানতে পারেনি, মনকষ্টে ভুগত! অভিষেকের মৃত্যুতে বিস্ফোরক বিপ্লব
সিনেমা থেকে সরে আসাটা মানতে পারেনি, মনকষ্টে ভুগত! অভিষেকের মৃত্যুতে বিস্ফোরক বিপ্লব

গতসপ্তাহে হঠাৎই বাংলা সিনেমা জগতকে স্তব্ধ করে দিয়ে প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। মাত্র ৫৭ বছর বয়সে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।  সকালেও শুটিংয়ে গিয়েছিলেন তিনি! রাতে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। জানা গিয়েছিল, মৃত্যুর দু-তিন দিন ধরে পেটের সমস্যা ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরোয়া না করে গত বুধবার রিয়েলিটি শো-তে তিনি অংশও নিয়েছিলেন। আর সেখানেই শুটিং চলাকালীন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার পরোয়া না করে বাড়ি ফিরে স্যালাইন নেন অভিনেতা। এরপর গতসপ্তাহে বৃহস্পতিবার ভোররাতে নিজের প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাড়িতেই তিনি মারা যান তিনি। অভিনেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে টলিউড।

অভিষেক চ্যাটার্জীর মৃত্যুতে একের পর এক অভিনেতা নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আর এবার অভিনেতার মৃত্যুর পর মুখ খুললেন বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জী! অভিষেকের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেছেন, তাঁরা দুজনে একসঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের থেকে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বয়সে বড় হলেও কাজের সূত্রে এতটাই বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল যে তাঁরা নাকি একে অপরকে ‘তুই’ সম্বোধন করতেন। বিপ্লব বাবুর কথায়,  “অভিষেকের বাড়ি ছিল বরাহনগরে। আমি ওঁকে মজা করে বলতাম ‘বরাহনগরের গঙ্গার পলিমাটি খাওয়া ছেলে ব্যাটা’।" স্মৃতিচারণায় তিনি জানিয়েছেন,  খুব ভালো ফিজিক ছিল অভিষেকের। এক্সারসাইজ করত। সেইসঙ্গে ভালো ফুটবল খেলত। লাভেবল বয় ছিল। সকলের সঙ্গে হেসে কথা বলা, আড্ডা মারা, ইয়ার্কি করা চলতেই থাকত।

বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় আর‌ও জানিয়েছেন, “ইদানিং ও বেশ মোটা হয়ে যাচ্ছিল। আমি ওকে বলেছিলাম শরীরটার দিকে নজর দিতে। কিন্তু আমাকে বলতো, এখন কি আর হবে।” এরপর‌ই বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওর মনে একটা খুব কষ্ট ছিল জানি। সিনেমা থেকে সরে আসাটা কিছুতেই ও মানতে পারত না। মনে মনে সবসময় গুমড়াতো”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটা সময় টালিগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় ও দাপুটে নায়ক।‌ তবে বর্তমানে সিনেমার তুলনায় সিরিয়ালে বেশি অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু দুই দশক আগেও নায়কের ভূমিকায় পর্দা কাঁপাতেন তিনি। তুখোড় অভিনয় ক্ষমতা, সুদর্শন চেহারায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে সমানতালে টক্কর দিতেন তিনি। তাঁর গুণগ্রাহীর সংখ্যাও কম ছিলনা। নিজের কাজ, নিজের দক্ষতা, প্রতিভা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন অভিষেক চ্যাটার্জি। তাঁর একাধিক সিনেমায় মুগ্ধ হয়েছে বাঙালি দর্শক।তরুন মজুমদার পরিচালিত সিনেমা পথভোলায় অভিনয় করে তিনি প্রথম পা রাখেন অভিনয় অঙ্গনে।

এরপর একে একে দহন, বাড়িওয়ালি, মধুর মিলন , সংঘর্ষ, ফিরিয়ে দাও, মায়ের আঁচল, আলো ,ওয়ান, নীলাচলে কিরীটি-এর মতো একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে চমকপ্রদ উত্থান হয় তাঁর। কিন্তু ব্যাপক উত্থানের পর হঠাৎই কেমন যেনও হারিয়ে যান তিনি। প্রসেনজিতের সমসাময়িক সময়ে ভালো অভিনেতা হয়েও নায়কের চরিত্রের পরিবর্তে তাঁর কাছে আসতে শুরু করে সহ-অভিনেতার চরিত্রে অভিনয়ের অফার। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় এইসবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতেন তিনি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি জানান টলিউডের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন টলিউডের সুপারস্টারদের বিরুদ্ধেও। সেই নিয়ে বিতর্কও ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু বরাবরই স্পষ্টবাদী স্বভাবের অভিষেক পরোয়া করতেন না কোন‌কিছুরই।