শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

পল্লবীর মৃত্যুতে খুন ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের পরিবারের! সাগ্নিককে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২২, ১০:০৩ এএম | আপডেট: মে ১৭, ২০২২, ০৪:১৬ পিএম

পল্লবীর মৃত্যুতে খুন ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের পরিবারের! সাগ্নিককে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের
পল্লবীর মৃত্যুতে খুন ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের পরিবারের! সাগ্নিককে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের / ছবি সৌজন্যে- ইন্সটাগ্রাম

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলা টেলিভিশন দুনিয়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্যজনক মৃত্যুতে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে গোটা টলি ইন্ডাস্ট্রিতে। অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে জোর চর্চা। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, আত্মহত্যা করেছেন অভিনেত্রী। তবে, প্রেমিক সাগ্নিকের বিরুদ্ধে উঠে আসছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্রমশ অভিনেত্রীর মৃত্যু ঘিরে বারছে রহস্য। এবার তাঁর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তী এবং তাঁর এক বান্ধবীর বিরুদ্ধে গড়ফা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন অভিনেত্রীর পরিবার। 

পল্লবীর পরিবারের অভিযোগ, ‘পল্লবী আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়’, প্রথম থেকেই অবশ্য অভিনেত্রীর পরিবার এবং তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা এই কথা বলে চলেছেন। এরপরই পল্লবীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। জানা গিয়েছে খুনের পাশাপাশি প্রেমিক সাগ্নিকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগেও এফ আই আর করা হয়। এই অভিযোগ পল্লবীর বান্ধবী (সাগ্নিক ছাড়াও যার নামে অভিযোগ করা হয়েছে) মানতে না চাইলেও, এই বিষয়ে মুখ খুললেও, এখনও পর্যন্ত সাগ্নিকের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।  

এদিকে, পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত পল্লবীর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিককে গড়ফা থানায় ডেকে সোমবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত থানায় ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক অতুল ভি। পুলিশ সূত্রে খবর, পল্লবী এবং সাগ্নিক যৌথভাবে কিছু সম্পত্তি কিনেছিলেন। সেইসমস্ত আর্থিক লেনদেনের বিষয়েও তদন্তকারীরা সাগ্নিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। 

পল্লবীর পরিবারের অভিযোগ, পল্লবীর সঙ্গে লিভ-ইন থাকাকালীন, হাওড়ার জগাছার বাসিন্দা তথা মৃত অভিনেত্রীর ঐন্দ্রিলার বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাগ্নিকের। আরও অভিযোগ, পল্লবীর অনুপস্থিতিতে তাঁদের গড়ফার ফ্ল্যাটে যাতায়াত ছিল ঐন্দ্রিলার। শুধু তাই নয়, পল্লবীর মৃত্যুর পর, বাঙুর হাসপাতালেও ছিলেন তিনি।

গতকালই সাগ্নিক চক্রবর্তী এবং ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে খুন, প্রতারণা- সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। সাগ্নিকের আগে একটি রেজিস্ট্রি বিয়েও হয়েছিল। এখনও ডিভোর্স হয়নি সাগ্নিকের, এমনই অভিযোগ। ফ্ল্যাটে একাধিক পুরুষ বন্ধু আসত, যা নিয়ে আপত্তি ছিল পল্লবী এবং অন্যান্য বাসিন্দাদের। আপত্তির কথা অন্যান্য বাসিন্দারা জানিয়েওছিলেন। যা নিয়ে সাগ্নিক এবং পল্লবীর মধ্যে অশান্তিও হয়।  ফ্ল্যাটের কাজের লোকও জানিয়েছেন যে, তাঁদের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত যা হাতাহাতির পর্যায়েও গেছে কয়েকবার। 

গড়ফার এক বহুতলে থাকতেন অভিনেত্রী পল্লবী। জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক ধরে সাগ্নিক নামের এক যুবকের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন তিনি। দু’জনে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। জানা গিয়েছে যে, পল্লবীর অনেক ঋণ ছিল একটি ফ্ল্যাট এবং নতুন গাড়ি কিনেছিলেন পল্লবী। যা কিনতে অনেক টাকা দিয়েছিলেন পল্লবী। এদিকে, পল্লবীর প্রেমিকের দাবি, আর্থিক কারণে প্রবল চিন্তায় ছিলেন পল্লবী। গাড়ি-সহ একাধিক জিনিস ইএমআই-তে কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘মন মানে না’ সিরিয়ালের পর তেমন কোনও কাজ পাচ্ছিলেন না অভিনেত্রী। তাই ইএমআই কীভাবে শোধ করবেন তা চিন্তায় দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তিনি বারবার পল্লবীকে বোঝানের চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করেছেন সাগ্নিকে। পুলিশ সাগ্নিকের বক্তব্য যাচাই করে দেখছে। 

এদিকে জানা গিয়েছে, পল্লবীর পরিবারের দাবি, গাড়ি ও নতুন ৮০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট কিনতে বেশি টাকাই পল্লবী দিয়েছিলেন। অথচ নতুন ফ্ল্যাট ছিল সাগ্নিক ও তাঁর বাবার নামেই। তাছাড়া পল্লবী এবং সাগ্নিকের একাধিক জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ছিল বলে জানিয়েছেন পল্লবীর বাবা। ঘটনার দিন সকালেও অশান্তি হয় বলেই খবর। এরপরই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এমনকি সম্প্রতি পল্লবী তাঁর বন্ধুদের কাছেও জানিয়েছিলেন যে, তিনি এই সম্পর্ক থেকে তিনি বেরোতে চান। 

প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেত্রী পল্লবী দে-এর ঝুলন্ত দেহ। বর্তমানে তিনি কালার্স বাংলায় ‘মন মানে না’ ধারাবাহিকে গৌরীর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন।  পল্লবীর মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই। এবার খুন ও প্রতারণার অভিযোগ দায়েরের পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।