শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

নিথর ঐন্দ্রিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে সব্যসাচী, করলেন প্রণাম! ভিডিও দেখে কাঁদছে নেটদুনিয়াও

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৩:৪৭ পিএম | আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৯:৪৭ পিএম

নিথর ঐন্দ্রিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে সব্যসাচী, করলেন প্রণাম! ভিডিও দেখে কাঁদছে নেটদুনিয়াও
নিথর ঐন্দ্রিলার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় বসে সব্যসাচী, করলেন প্রণাম! ভিডিও দেখে কাঁদছে নেটদুনিয়াও

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চলে গেছেন ঐন্দ্রিলা। তাঁর আর ফিনিক্স হওয়া হল না। তারকা ঐন্দ্রিলা চলে গেলেন তারাদের দেশে। ১ নভেম্বর থেকে দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হওয়া পর্যন্ত পাশে ছিলেন ‘কাছের মানুষ’ সব্যসাচী। কাল বিকেলের পর তখন দেহ পৌঁছেছে কেওড়াতলায়। তার আগে ঐন্দ্রিলাকে নিজের হাতে সাজিয়েছেন তাঁর দিদি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর শেষকৃত্য হবে।

ঠিক সেই সময়ে দেখা গেল সব্যসাচীকে। পুরোপুরি বিধ্বস্ত। যেন সব হারিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিতে শুধুই একরাশ শূন্যতা। যেন প্রিয় ঐন্দ্রিলাকে যেতে দিতে চাইছে না মন। কিন্তু তবুও যে যেতে দিতে হবে। মৃত্যুর কাছে হার মেনে নিয়েছেন ‘লড়াকু’ ঐন্দ্রিলা শর্মা। মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্রয়াত ‘জিয়ন কাঠি’ খ্যাত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। পিছনে রেখে গিয়েছে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু, সহকর্মী, এবং অবশ্যই কাছের মানুষ সব্যসাচীকে। কঠিন সময়ে ঐন্দ্রিলার পাশে সবসময় ছিলেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলা এবং সব্যসাচীর সম্পর্ক সকলের কাছেই উদাহরণস্বরূপ। বন্ধুত্ব, ভালোবাসার পাঠ শিখিয়েছে বারবার তাঁদের সম্পর্ক। তাঁদের সেই সম্পর্কের কাছে মৃত্যুও হার মেনেছে বারে-বারে। সব্যসাচী চৌধুরী ও ঐন্দ্রিলা শর্মার সম্পর্ক এমনই সুরে সাজানো। তবে, রবিবার সেই রূপকথা যেন তাসের দেশের মতো ভেঙে পড়ল। সকলের সমস্ত চেষ্টা, প্রার্থনা ব্যর্থ করে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।

ঐন্দ্রিলা শর্মা আর তাঁর সঙ্গেই ছায়াসঙ্গীর মতো লড়ছিলেন সব্যসাচী চৌধুরীও প্রত্যেক কঠিন মুহূর্তে। তাই তো রবিবার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে ঐন্দ্রিলার নিথর, প্রাণহীন দেহটার পাশে বসে থাকা সব্যসাচীকে দেখা গেল বিমর্ষ-নিস্তেজ। প্রিয় মানুষটাকে ফেরাতে না পেরে, লড়াইয়ে যেন হেরে গিয়েছেন সব্যসাচীও। সব্যসাচী যেন যন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছেন। কোনও কথা নেই। সবই করছিলেন যন্ত্রের মতো। একেবারে চুপ, যেন সর্বহারা। যেন কিছুই আর ফিরে পাওয়ার নেই। যন্ত্রের মতো, নীরব বসে। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনিও। চোখের জলও বোধহয় শুকিয়ে গেছে তাঁর। এদিন হাসপাতালে ঐন্দ্রিলার নিস্তেজ দেহের দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর খবর জানার পর থেকেই জল পর্যন্ত খাননি সব্যসাচী। একফোঁটা চোখের জলও ফেলেননি।

কিন্তু শেষ বিদায়ের আগে ঐন্দ্রিলার পা ধরে কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। চুম্বনে ভরিয়ে দেন পা। করলেন প্রণামও। ২৪ বছরের তরুণ তরতাজা মেয়েটি যে কঠিন লড়াই করেছেন এতদিন যেন তাকেই কুর্নিশ জানালেন প্রেমিক সব্যসাচী। ওই পা যে তাঁর আর ছোঁয়া হবে না। নিজের হাতে পরিয়ে দিলেন চন্দনও। তাকিয়ে রইলেন প্রিয় ঐন্দ্রিলার দিকে। সেই ভিডিওই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিওতেই দেখা গিয়েছে এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। যা দেখে নেটিজেনদের চোখেও জল। একটাই প্রশ্ন সকলের মনে, ‘আর কতোটা পথ পেরলে তবে সব্যসাচীর মতো প্রেমিক হওয়া যায়?’

গত ১ নভেম্বর ঐন্দ্রিলার ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকেই তাঁর পাশে ছায়ার মতো ছিলেন সব্যসাচী। হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালেই থাকছিলেন ২৪ ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত ICU-তে ছিলেন। তাঁর লড়াইকে যখন কুর্নিশ জানাচ্ছে সকলে, সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মায়ের কিছু হলে বাবা যেটা করত, আমিও সেটাই করছি।’ এর জন্য তাঁকে আলাদা করে ক্রেডিট দেওয়ার দরকার নেই বলেই জানিয়েছিলেন বামাখ্যাপা খ্যাত সব্যসাচী।

এরপর বুধবার ঐন্দ্রিলা শর্মার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। একটা একটা করে হার্ট বিট কমে যাচ্ছিল। আর তাঁর বুক ভেঙে যাচ্ছিল এক চরম অসহায়তায়। তবু শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছেন তিনি, আশা ছাড়েননি। প্রত্যেক মুহূর্তে ভেবেছেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, নিয়তির কাছে হার মানতেই হল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২০ দিন ধরে চলে লড়াই। শনিবার রাতে প্রায় দশবার হৃদরোগে আক্রান হন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এরপরেই রবিবার দুপুরে অঘটন।

২০১৭ সালে অভিনয়ের কেরিয়ার শুরু করেন ঐন্দ্রিলা। প্রথম অভিনয় করেছিলেন ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের মধ্যে দিয়ে। সেখান থেকেই আলাপ সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি সিরিয়াল ঝুমুর, মহাপীঠ তারাপীঠ, জীবনজ্যোতি, জীবনকথা, জিয়নকাঠি ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে এবছর ‍‍`অসাধারণ প্রত্যাবর্তন‍‍` বিভাগে টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। জীবনে দু-দুবার ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু এবার আর ফেরা হল না।