শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

কোনওদিন গান শেখেননি, ছিলেন কিশোর ভক্ত! জন্মদিনে রইল KK-র জীবনের অজানা কাহিনী

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২, ০২:০৪ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৮:০৪ পিএম

কোনওদিন গান শেখেননি, ছিলেন কিশোর ভক্ত! জন্মদিনে রইল KK-র জীবনের অজানা কাহিনী
কোনওদিন গান শেখেননি, ছিলেন কিশোর ভক্ত! জন্মদিনে রইল KK-র জীবনের অজানা কাহিনী

প্রায় মাস আড়াই হয়ে গেল কেকে আর নেই! গত ৩১ মে, নজরুলমঞ্চে অনুষ্ঠান করার পর অসুস্থ বোধ করেন কেকে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফিরে গিয়ে ঘটে যায় অঘটন। তাঁর ম্যানেজারের দাবি অনুয়ায়ী, হোটেলের ঘরে ঢুকে তিনি পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মোমিনপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

‍‍`হম, রহে ইয়া না রহে কাল...‍‍` মঞ্চে গাওয়া এটিই শেষ গান ছিল কেকে‍‍`র। তারপরের ছবিটা এখনও মেনে নিতে পারছে না দেশবাসী। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যু হল এই গায়কের। সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকা সত্ত্বেও এত কম বয়সে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না কেউই।

জীবিত থাকলে আজকের দিনে ৫৩ বছরে পা দিতেন কেকে। ১৯৬৮ সালের ২৩ অগষ্ট দিল্লিতে এক মালায়লি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। তবে তিনি ‍‍`কেকে‍‍` নামেই বিশ্ব বিখ্যাত। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়াশুনা করেন কেকে, এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক হন। এরপর তিনি বিপণন সহযোগী হিসেবে প্রায় আট মাস কাজ করেছিলেন। তারপর চাকরি ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে যান।

ছোট থেকেই সঙ্গীতের আবহে বড় হয়ে ওঠা কেকে-র। মা-বাবা দু‍‍`জনেই খুব ভাল গান গাইতেন। ১৯৯১ সালে দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা জ্যোতি-কে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে, ছেলে নকুলকৃষ্ণ কুন্নাথ এবং মেয়ে তামারা কুন্নাথ। ছোটো থেকেই তাঁর গানের গলা ভাল। কখনও কোথাও তিনি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেননি। তাঁর বাবা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পাঠালেও দু‍‍`দিনেই প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া বন্ধ করে দেন। বলতেন, কিশোর কুমার কখনও গান শিখে গায়ক হননি। তাই তিনিও ভাল গায়ক হলে গান না শিখেই হবেন। গায়ক কিশোর কুমার এবং সঙ্গীত পরিচালক আর ডি বর্মন-এর থেকেই তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

১. অনেক দিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে কেকে বলেছিলেন, তিনি গানের জগতে আসার আগে হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন। এর পর মুম্বইয়ে চলে আসেন ১৯৯৪ সালে। সোনি মিউজিকের একটি শোয়ে তিনি বলেছিলেন, স্ত্রী জ্যোতির জোরাজুরিতেই গান নিয়ে তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছিলেন।

২. বলিউডে প্রথম ব্রেক পাওয়ার আগে অন্তত ৩,৫০০ বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল গেয়েছেন তিনি।

বলিউড হাঙ্গামার একটি সাক্ষাৎকারে কেকে বলেছিলেন, একবার কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী হরিহরণ দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে স্পট করেন। হরিহরণ তাঁর গান শুনে মুম্বই চলে আসতে বলেন।

৪. গুলজারের মাচিস ছবিতে গান গেয়ে প্রথম বলিউডে পদার্পণ। ছোড় আয়ে হম ওহ গালিয়াঁ। তাঁর সঙ্গে সহশিল্পী ছিলেন হরিহরণ, সুরেশ ওয়াড়েকর এবং বিনোদ সেহগল। বিশাল ভরদ্বাজ ছিলেন সঙ্গীতকার। সেই গান ছিল সুপারহিট।
কিশোর কুমারের গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কেকে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কিশোর কুমার ছিল তাঁর অনুপ্রেরণা।

৬. ধ্রুপদী সঙ্গীতে কোনওদিন প্রশিক্ষিত ছিলেন না। একটি সঙ্গীত স্কুলে কিছুদিন গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ না হওয়ায় বাবা তাঁকে আর জোর করেননি। কেকে বলেছিলেন, ছোট থেকেই শুনে শুনে গান শিখেছি। এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত গুণ বলতে পারেন। কিশোরদাও কোনওদিন প্রথাগতি গানের শিক্ষা নেননি। তাই আমার সঙ্গীতের ক্লাসে না যাওয়ার আরও অনেক কারণ তো ছিলই।

৭. গানের রিয়ালিটি শোয়ে বিচারকের আসনও উজ্জ্বল করেছিলেন কেকে। ফেম গুরুকুল শোয়ের বিচারক ছিলেন তিনি। সেই রিয়ালিটি শো থেকেই বলিউড পেয়েছিল অরিজিৎ সিং-কে। এছাড়া আর কোনও শোয়ে বিচারক হননি তিনি।

৮. হিন্দি ছাড়াও তামিল, তেলুগু, মারাঠি, কন্নড়, বাংলা, মালয়ালম, গুজরাটি এবং অহমিয়া ভাষায় গান গেয়েছেন কেকে।

৯.এক ইন্টারভিউতে কেকে জানিয়েছিলেন, দিল্লীতে গান গাওয়ার সময় বিখ্যাত গায়ক হরিহরণ-এর নজরে আসেন তিনি। সেখানেই হরিহরণ তাঁকে মুম্বই আসার জন্য উৎসাহ দেন।

১০. ১৯৯৬ সালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‍‍`মাচিস‍‍`-এ ‍‍`ছোড় আয়ে হাম‍‍` গানটির একটি ছোটো অংশ গেয়েছিলেন কেকে। এর পর ১৯৯৯ সালে ‍‍`হম দিল দে চুকে সনম‍‍` সিনেমার বিখ্যাত গান ‍‍`তড়প তড়প কে ইস দিল সে...‍‍` গানের মাধ্যমেই বলিউডে তাঁর দাপট শুরু হয়।

১১. ১৯৯৯ সালেই মুক্তি পায় তাঁর বিখ্যাত অ্যালবাম ‍‍`পল‍‍`। যার গান ‍‍`হম রহে ইয়া না রহে কাল...‍‍` রাতারাতি লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কৃষ্ণকুমার থেকে হয়ে ওঠেন কেকে। এর ঠিক আট বছর পর ২০০৮ সালে কেকে-র দ্বিতীয় অ্যালবাম ‍‍`হামসফর‍‍` রিলিজ হয়।

১২. বলিউডে আত্মপ্রকাশের আগেই কেকে ১১টি ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিজ্ঞাপনী গান গেয়ে ফেলেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থনে তিনি ‍‍`জোশ অব ইন্ডিয়া‍‍` বলে একটি গান গেয়েছিলেন। এই গানের ভিডিয়োতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরাও ছিলেন। ২০০৯ সালে, ‍‍`বচনা অ্যায় হাসিনো‍‍` সিনেমার ‍‍`খুদা জানে‍‍` গানটির জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সেরা নেপথ্য গায়কের পুরস্কার জেতেন।

১৩. গানের রিয়্যালিটি শো ‍‍`ফেম গুরুকুল‍‍`-এ তিনি জুরি সদস্য হিসেবে আমন্ত্রিত হন। এ ছাড়াও আরও অনেক গানের রিয়্যালিটি শোয়ে জুরি সদস্য এবং অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন কেকে।