বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

জন অরণ্য থেকে বিদায়! না ফেরার দেশে অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০৩:৩২ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০৯:৪০ পিএম

জন অরণ্য থেকে বিদায়! না ফেরার দেশে অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
জন অরণ্য থেকে বিদায়! না ফেরার দেশে অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ জন অরণ্য ছেড়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। বেশ কয়েকদিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। সোমবার প্রয়াত হলেন। সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তে বিষক্রিয়া- সহ বেশকিছু সমস্যা ছিল অভিনেতার। গত কয়েকদিন ধরেই দমদম ক্যান্টনমেন্টের মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালের বেসরকারি বিভাগে ভর্তি ছিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।

সেখানেই আজ সকাল সোয়া ৮ টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৬ বছরের অভিনেতা। বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে অভিনয় জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। পাশাপাশি তিনি অভিনেতার পরিবার-পরিজন এবং অসংখ্য অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ফুসফুসে সংক্রমণের সঙ্গে নিউমোনিয়ায় আক্রন্ত হয়েছিলেন, এর সঙ্গে রক্তে বিষক্রিয়াও বেড়েছিল। অভিনেতার অসুস্থতা বাড়তেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। দমদম ক্যান্টনমেন্টের মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালের বেসরকারি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, পরপর দুবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেতা। এই বছরের শুরুতেই তিনি দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। এরপরেও সুস্থ হয়ে তিনি শ্যুটিং-এ ফেরেন। শেষও করেছিলেন শ্যুটিং-এর কাজ। কিন্তু ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল। শনিবার পর্যন্ত তিনি চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন। কিন্তু তারপর সোমবারেই সব শেষ। দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। মাঝে মাঝেই কার্বন জমে যেত তাঁর ফুসফুসে। পরিচালক নির্মল চক্রবর্তীর ছবি ‘দত্তা’র শ্যুটিং করছিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। শ্যুটিং শেষও করেছিলেন কিন্তু বাকি থেকে গেছে ডাবিং পর্ব। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। প্রথমে তাঁকে ভর্তি করা হয় নাগেরবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে তাঁকে ভর্তি করানো হয় দমদম ক্যান্টনমেন্টের মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালের বেসরকারি বিভাগে। সেখানেই ভেন্টিনেশনে রাখা হয়েছিল।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার হেয়ার স্কুলে। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভরতি হয়েছিলেন সিটি কলেজে। কলেজের পড়া শেষ করেই, আইন পড়তে শুরু করেন। এদিকে, কলেজে পড়াকালীন তিনি অভিনয়ের প্রতি আকর্ষিত হন। থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন। আইন পাশ করার পরও, নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেছেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। সপ্তাহের অন্যান্য দিন ওকালতির পেশায় ব্যস্ত থাকলেও, ছুটির দু’টো দিন নিয়ম করে সময় দিতেন নাটকের মঞ্চে।

নক্ষত্র থিয়েটার গ্রুপের হয়ে নাটক করেছিলেন। এখানেই তাতেই সত্যজিৎ রায়ের নজরে পড়েছিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। ফল, ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সত্যজিৎ রায়ের ‘জনঅরণ্য’ ছবিতে সোমনাথের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি নজর কেড়েছিলেন। সত্যজিৎ রায় থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ-এর মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘দূরত্ব’, ‘অশ্লীলতার দায়ে’, ‘সতী’, ‘হীরের আংটি’, ‍‍‘পুরুষোত্তম‍’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘দহন’, ‘উৎসব’-এর মতো ছবি। অভিনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের দুই সন্তান। পুত্র-কন্যা উভয়েই থাকেন দুবাইয়ে। রবিবারই সকালে মেয়ে কলকাতায় এসেছেন।