রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পায়ে হেঁটে লাদাখ পাড়ি! প্রথম বাঙালি হিসাবে এই নজির সিঙ্গুরের মিলন মাঝির

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২২, ০২:২৯ পিএম | আপডেট: মার্চ ১, ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পায়ে হেঁটে লাদাখ পাড়ি! প্রথম বাঙালি হিসাবে এই নজির সিঙ্গুরের মিলন মাঝির
স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পায়ে হেঁটে লাদাখ পাড়ি! প্রথম বাঙালি হিসাবে এই নজির সিঙ্গুরের মিলন মাঝির

কথায় বলে, বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। তাই পকেটের জোর না থাকলেও দমে যায় না  ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি মন। বরং ইচ্ছেশক্তির উপর ভর করেই অজানাকে জানতে পাড়ি দিতে পারে মাইলের পর মাইল পথ। সেরকমই এক বাঙালি হলেন হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা মিলন মাঝি। তাঁর কীর্তি শুনলে চোখ কপালে উঠবেই! রুকস্যাক পিঠে পায়ে হেঁটেই লাদাখ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। প্রথম বাঙালি হিসাবে এমন নজির গড়ার কাণ্ডারি হলেন সিঙ্গুরের এই যুবক।

মিলন মেকানিকালের কোর্স করে কিছুদিন চাকরি করেছেন। কিন্তু লকডাউন কালে নিজের কাজ হারান তিনি। এরপর বাবার চায়ের দোকানে বাবার সাহায্যে হাত লাগান। কিন্তু অচেনাকে চেনা, অজানা জানা, অদেখাকে দেখার অদম্য ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত তাঁকে। স্বপ্ন ছিল বরফের দেশ লাদাখ যাওয়ার। কিন্তু নিম্নবিত্ত ঘরে বাইক কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছতার কাছে হার মানতে নারাজ ছিলেন ২৬ বছরের এই যুবক। তাই একদিন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন। ঠিক করলেন পায়ে হেঁটেই পাড়ি দেবেন লাদাখ।

যেমনি ভাবা তেমনি শুরু প্রস্তুতি। গত দু’মাস ধরে রোজ সকাল বিকেল হাঁটা ও দৌড় শুরু করেন মিলন। নিজের শরীরকে এমন ভাবে তৈরি করেন যাতে প্রায় ২৫০০কিলোমিটার পথ হাঁটতে সক্ষম হন। অবশেষে চলতি মাসের ২২ তারিখ হাওড়া ব্রিজ থেকে লাদাখের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন সিঙ্গুরের দামাল এই যুবক। সঙ্গী বলতে পিঠে একটি ৩৫ কেজির রুকস্যাক যাতে রয়েছে কিছু জামাকাপড়, টেন্ট, শুকনো খাবার, জল।

প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ হাঁটার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু মিলনের। ইতিমধ্যেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পেরিয়ে গিয়েছেন। আজ, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি পা রাখবেন ঝাড়খণ্ডে। রাইডার্স কমিউনিটি অফ বেঙ্গল নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে মিলন মাঝির পায়ে হেঁটে লাদাখ পাড়ি দেওয়ার খবরটি প্রথম ভাইরাল হয়। তারপর বিভিন্ন জায়গাতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে তার খবর। সােশ্যাল মিডিয়াতেও তাকে নিয়ে চলছে তুমুল চর্চা। মিলন জানিয়েছেন, তিনি ঠিক করেছিলেন এই বিশেষ যাত্রায় কোনও হোটেলে থাকবেন না। তবে এখনও পর্যন্ত মানুষের যেভাবে ভালোবাসা পাচ্ছেন তাতে কেউ না কেউ ভালোবেসে ঠিকই রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আসলে এই প্রথমবার কোনাে বাঙালি যুবক পায়ে হেঁটে লাদাখ পাড়ি দিচ্ছেন। তাই প্রত্যেক বাঙালিই চাইছেন মিলন জয়ী হয়ে ফিরুক।

সকলের আশীর্বাদ ও ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, ক্লান্তিকে জয় করে এগােত থাকেন মিলন মাঝি। এখন থেকেই তিনি দিন গুণছেন যে কবে ভূস্বর্গের পাদদেশে পা রাখবেন তিনি! এ যে নিছকই অ্যাডভেঞ্চার তা নয়, বরং এ যেন জেদকে জিতিয়ে ফেরার লড়াই। আর মিলনের আত্মবিশ্বাস এ লড়াই তিনি জিতেই ফিরবেন৷ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের কাছে তিনি যেন ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার আরেক নাম!