শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণে সত্যজিৎ রায়, রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: মে ২, ২০২২, ১১:২৮ এএম | আপডেট: মে ২, ২০২২, ০৫:২৮ পিএম

১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণে সত্যজিৎ রায়, রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য
১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণে সত্যজিৎ রায়, রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য

১৯২১ সালের ২ মে, পৃথিবীর বুকে জন্ম নেন এক বিরল প্রতিভা। পরবর্তীতে যিনি শুধু এই দেশেরই নয়, হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম বরেণ্য এক ব্যক্তিত্ব৷ তিনি ছিলেন একাধারে আলোকচিত্রী, চিত্রকর, পরিচালক, সাহিত্যিক ও সঙ্গীতজ্ঞ। চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য, চিত্রকলা ও সঙ্গীতে তাঁর কৃতিত্ব বিস্মিত করেছে সকলকেই। বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে তিনি পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। তাঁকে ছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগৎ কার্যত অসম্পূর্ণ। তিনি, সত্যজিৎ রায়।

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা হলেও উনিশ শতকের শেষভাগে সেই দেশ ছেড়ে সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন সত্যজিতের পূর্বপুরুষরা। কলকাতাতেই বেড়ে ওঠেন সত্যজিৎ।  স্কুলজীবন কাটে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে। এরপরের পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে।

কর্মজীবনে শুরু কলকাতার নামী ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ শুরু করে৷ ডি জে কিমার নামক ওই সংস্থায় জুনিয়র ভিস্যুয়ালাইজার হিসেবে কাজে হাতেখড়ি সত্যজিতের৷ পরবর্তীতে নিজেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। তবে প্রথম ছবি ‍‍`পথের পাঁচালি‍‍` বানাতেই গিয়েই চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন৷  এই সিনেমা নির্মাণের টাকা-পয়সার জোগার করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গল গভর্নমেন্টের কাছে পাওয়া সরকারি ঋণের অর্থে সিনেমার কাজ শেষ হয়।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় ‍‍`পথের পাঁচালি‍‍`! ব্যাস! এরপর আর পিছন ফিরে তাকাননি সত্যজিৎ।  ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ তিনি এরপর পরিচালনা করেন মোট ৩৭ টি ছবি। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হয়ে ওঠেন তিনি৷ একে একে নির্মাণ করেন  ‘অপুর সংসার’, ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’, ‘অভিযান’, ‘কাপুরুষ’, ‘মহাপুরুষ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘জনারণ্য’, ‘হীরক রাজার দেশ’, ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’, ‘আগন্তক’, ‍‍`ঘরে ও বাইরে‍‍`র মতো কালজয়ী সব চলচ্চিত্র। যা দর্শকমনে চিরকালীন ছাপ ফেলে যায়। সত্যজিৎ রায় নির্মিত পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার- এই তিনটি চলচ্চিত্রকে ‘অপু ত্রয়ী’ বলা হয়, যা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে স্বীকৃত।

শুধু চলচ্চিত্র জগতেই নয়, সাহিত্যেও সত্যজিতের হাতযশ ছিল অসামান্য। গোয়েন্দা ফেলুদা, বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু ও তারিনীখুড়ো- এই তিনটি কালজয়ী চরিত্রই তাঁর সৃষ্টি৷ এছাড়াও লেখেন অজস্র ছোট গল্প। পাঠকদের কাছে যা আজও সমাদৃত।

বলাই বাহুল্য, অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন সত্যজিৎ রায়! শিল্পকলার নানা শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব চিন্তাধারা দিয়ে চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য উপমহাদেশের প্রথম নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন অস্কারও। ১৯৯২ সালে দ্যা অ্যাকাডেমি অব মোশান পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সের তরফ থেকে সত্যজিৎকে সম্মানসূচক অস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা। বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছেন বাংলা তথা দেশের নাম। তাই বাঙালির কাছে সত্যজিৎ রায় মানেই যেন অন্য এক আবেগ। উল্লেখ্য, আজ ১০১তম বছরে পা দিলেন সত্যজিৎ রায়। জন্মবার্ষিকীকে তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য।